পাতা:সাহিত্যে নারী ⦂ স্রষ্ট্রী ও সৃষ্টি - অনুরূপা দেবী.pdf/১২১

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
সাহিত্যে নারী ⦂ স্রষ্ট্রী ও সৃষ্টি
১০১

নারী কবি জন্মেছেন, তাঁদের প্রত্যেকের ওপরেই তাঁদের সময়ের ছাপ কমবেশী পড়েছে। প্রাক্-চৈতন্যযুগে সহজিয়া প্রভাব, চৈতন্যের এবং তাঁর পরবর্তী যুগে বৈষ্ণব-প্রভাব এবং তার পরের শতাব্দী থেকে মঙ্গলকাব্যগুলির প্রভাব, সে যুগের নারীর লেখায় সুস্পষ্ট দেখা যায়। ধর্মের কাহিনী ছাড়া একেবারে ব্যক্তিগত জীবনের সুখদুঃখ নিয়ে কাব্য রচনাও নারীর দ্বারা আরম্ভ হয়েছে, তার প্রথম নিদর্শন পাই বাংলা দেশের সর্বপ্রথম বাঙ্গালী কবি রামীর রচনায়। তাঁর আগের যুগের যে সব ছেলে-ভুলানো ছড়া, গাথা প্রভৃতি নারী-রচিত লোক-সাহিত্যের পরিচয় পাওয়া যায়, সেগুলির মধ্যে ভাবের গভীরতার এবং পদলালিত্যের অভাব নেই, সহস্রাধিক বৎসর ধরে যোগিপাল, ভোগিপাল এবং মহীপালের গান মেয়েরা গেয়েছে, ‘ধান ভানতে শিবের গীত’ গাওয়াও কম হয়নি, কিন্তু সেগুলির রচয়িতা বা রচয়িত্রী যে কে, তা’ কেউ জানে না এবং জানা সম্ভবও নয়, সুতরাং তাঁদের প্রাপ্য সম্মান তাঁরা বোধ হয় ব্যক্তিগতভাবে কোনো দিনই পাবেন না। খৃষ্টীয় পঞ্চদশ শতাব্দীতে রজকিনী রামী, রামতারা বা তারার রচিত পদগুলির পূর্বে লেখিকার ভণিতাযুক্ত কোনো লেখা আমরা বাংলায় পাইনি। চণ্ডীদাস যে রজক-কুমারীকে বাগ্বাদিনী এবং গায়ত্রীর সঙ্গে তুলনা ক’রতে দ্বিধা করেননি, যাঁর সম্বন্ধে বলেছেন, শত শত বাশুলী তাঁকে যে প্রেম শেখাতে পারতেন না, রামী তা শিখিয়েছে, স্বয়ং ব্রহ্মা এসে যে জ্ঞান দিতে পারতেন না, রামী তাই দিয়েছে, সেই রমণী শুধুই রূপের দ্বারা তাঁর চিত্ত হরণ করেননি, সে যুগের পক্ষে আশাতীত কবিপ্রতিভা দ্বারা রবীন্দ্র-পূর্ব যুগের সর্বশ্রেষ্ঠ বঙ্গ-কবির হৃদয় তিনি