পাতা:সাহিত্যে নারী ⦂ স্রষ্ট্রী ও সৃষ্টি - অনুরূপা দেবী.pdf/১৩

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

সাহিত্যে নারী : স্রষ্ট্রী ও সৃষ্টি

শ্রীমতী অনুরূপা দেবী

 মানুষের জীবনকে প্রধানতঃ দু’টো ভাগে ভাগ করা যায়। একটা দৈবায়ত্ত, আর একটা তার নিজায়ত্ত। প্রথমটাতে সে অন্যান্য ইতর জীবের মতো প্রকৃতির অধীন, প্রবৃত্তির দাস, জন্মায় মরে, খায় ঘুমোয়, সুখে হাসে, দুঃখে কাঁদে। দ্বিতীয়টাতে সে প্রকৃতির নিয়ন্তা, প্রবৃত্তির প্রভু, বিজ্ঞানের সাহায্যে সিন্ধু-পর্বত দেশকালের ব্যবধান দূর করে, বহ্নি-বিদ্যুৎকে আজ্ঞাবহ করে, মরু, মারী, শীতাতপ এবং শত্রু জয় করে, আকাশে ওড়ে, পাতালে ঢোকে: দর্শনের সাহায্যে জীবাত্মা পরমাত্মার, ইহ-পরলোকের গভীর রহস্যের সন্ধান লাভ ক'রে, রোগ, রিপু, শোক, মালিন্যের ঊর্দ্ধে উঠে শান্তি লাভ এবং অনেকের মতে মুক্তি লাভ করে। সাহিত্য, শিল্প ও সঙ্গীতের সাহায্যে বাস্তব জগতের সহস্র দুঃখদৈন্যের মধ্যে দেশকাল নিরপেক্ষ অবান্তর আনন্দলোক রচনা ক'রে, অপার্থিব সখৈশ্বর্য উপভোগ করে, নিঃসঙ্গ অবস্থায় সঙ্গী লাভ করে, অজ্ঞান অবস্থায় জ্ঞানদাতা গুরু লাভ করে, অতীতে ভবিষ্যতে স্বদেশে বিদেশে স্নেহ প্রীতির নিগূঢ় সম্বন্ধ স্থাপন করে। মানবসভ্যতার আদিযুগ থেকে মানুষে পশুতে এই পার্থক্য লক্ষিত হয়ে আসছে। পশু অল্পেই সন্তুষ্ট, মানুষ অল্পে সন্তুষ্ট নয়। প্রাচীন ভারতের ঋষি যে-দিন বলেছিলেন, “নাল্পে সুখমস্তি-ভূমৈর সুখং” সে-দিন পৃথিবীর সবদেশের সর্বমানবের অন্তরের কামনাই তাঁর কণ্ঠে বাণীরূপ গ্রহণ করেছিল। পশুপাখীর মতো শুধু খেয়ে ঘুমিয়ে মানুষ তৃপ্তি পায় না, বাঁচতে পারে না। আম-মাংসাসী আদিম আরণ্যকও নাচে গায়, গল্প বলে, ছবি আঁকে। নিজের সৃষ্ট যে-সব ঐশ্বর্যে মানুষ