পাতা:সাহিত্যে নারী ⦂ স্রষ্ট্রী ও সৃষ্টি - অনুরূপা দেবী.pdf/১৩২

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
১১২
সাহিত্যে নারী ⦂ স্রষ্ট্রী ও সৃষ্টি

কত চারুবক্ত্রা সুবেশা সুকেশা।
সুনামা সুহাসা সুবাসা সুভাষা।”

 এই জাতীয় লেখা ভারতচন্দ্রের যুগের বিশেষত্ব, এজন্য লেখিকা একা অপরাধিনী নন। এই কাব্য কর্ণের তৃপ্তি সাধন করলেও মর্ম স্পর্শ করে না। তাঁর মতো শক্তিমতী লেখিকাও নিজ যুগের প্রভাব কাটিয়ে উঠতে পারেননি। এই বিদুষী নারী পিতৃগৃহে স্বামীর মৃত্যু-সংবাদ পেয়ে তাঁর খড়ম বুকে নিয়ে চিতানলে প্রাণ বিসর্জন করেন। আনন্দময়ীর পিস্তুতো বোন গঙ্গামণি দেবীর লেখা অনেক গান একসময়ে বিক্রমপুর অঞ্চলে প্রচলিত ছিল। এখনও তার কতকগুলি ওদেশের বিয়ের সময় গাওয়া হয়। আনন্দময়ীর বোন দয়াময়ীও বিদুষী ছিলেন, গঙ্গা এবং দয়াময়ীর অনুরোধে জয়নারায়ণ তাঁর চণ্ডিকামঙ্গলের তৃতীয় উপাখ্যানটি রচনা করেন। গঙ্গামণির কবিতায় বর্ণনা-বাহুল্য ছিল কিন্তু প্রসাদগুণের অভাব ছিল না। তাঁর কবিতার দু’ছত্র উদাহরণ দিচ্ছি:

‘জনক নন্দিনী সীতে হরিষে সাজায় রাণী।
শিরে শোভে সিঁথি পাটি হীরা মণি চুণী॥”

 বর্দ্ধমান জেলায় কলাইঝুটী গ্রামে অনুমান ১১৮২ সালে রূপমঞ্জরীর জন্ম হয়। ইনি জাতিতে বৈষ্ণব ছিলেন। ইহার মাতার নাম সুধামুখী। পিতা নারায়ণ দাস ইহাকে বাল্যকালে লেখাপড়া শিখাইতে আরম্ভ করেন। নারায়ণ দাসের আর কোন সন্তান হয় নাই। রূপমঞ্জরীর বিদ্যাশিক্ষায় এত অনুরাগ জন্মিল যে, নারায়ণ দাস বুদ্ধিমতী দুহিতাকে ব্যাকরণ পড়াইতে প্রবৃত্ত হইলেন কিন্তু রূপমঞ্জরী তাঁর অধ্যয়ন অধ্যাপনার সীমা