পাতা:সাহিত্যে নারী ⦂ স্রষ্ট্রী ও সৃষ্টি - অনুরূপা দেবী.pdf/১৩৮

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
১১৮
সাহিত্যে নারী ⦂ স্রষ্ট্রী ও সৃষ্টি

হিসাব ধরলে বহু পুরুষ লেখকের চেয়ে অধিকতর প্রতিভার পরিচয় দিয়েছিলেন সে কথা নিঃসঙ্কোচেই বলা চলে। তাঁদের জীবনের গণ্ডী ছিল অধিকাংশ ক্ষেত্রেই অন্তঃপুরের সঙ্কীর্ণ সীমার মধ্যে আবদ্ধ, বহির্জগতের সঙ্গে তাঁদের সম্পর্ক আজকের দিনের চেয়ে অনেক কম ছিল। তথাপি যে তাঁরা নির্ভয়ে এমন ক’রে সাহিত্যক্ষেত্রে এগিয়ে আসতে ভরসা ক’রেছিলেন সেই ত একটা বিস্ময়! পল্লীগ্রামের মেয়েরা যেটুকু স্বাধীনতা পেতেন, অধ্যাপক পণ্ডিতের বাড়ীর মেয়েরা শাস্ত্রজ্ঞান লাভের যেটুকু সুযোগ পেতেন, সহরের নব্য শিক্ষিত মধ্যবিত্ত সম্প্রদায়ের মেয়েদের প্রায়ই তা’ মিলত না। অতীতের কল্যাণ স্পর্শ তাঁরা হারিয়েছিলেন, অথচ বর্তমানের কল্যাণ তখনো তাঁদের স্পর্শ করেনি। জীবনের দুঃখ-দ্বন্দ্বের ভাগ পুরুষের সঙ্গে সমভাবেই তাঁদের নিতে হ’ত, কিন্তু বাইরের আনন্দে তাঁদের কোনো অংশ ছিল না। যে দেশের শ্রেষ্ঠতম পুরুষের মাথা পরাধীনতায় বিকিয়ে আছে, সেখানে মেয়েদের অবস্থা কত ভালোই বা হ’বে! তবু এই বাধা-বিপত্তির সঙ্গে যুদ্ধ ক’রেও সেদিন নারী যে শক্তির পরিচয় দিয়েছেন, তা নিতান্ত ন-গণ্য নয়, সেদিনে অল্প ও মধ্যশিক্ষিতা মেয়ে লেখিকাদের সংখ্যা নেহাৎ কমও ছিল না। বিংশ শতাব্দীর মাঝামাঝি পর্যন্ত আসতে আমরা ইতিমধ্যে সমাজের এবং সাহিত্যের অনেক পরিবর্তনও দেখলুম, পাঠক সমাজের রুচির এবং জীবনযাত্রার প্রথা বদলে যাবার সঙ্গে সঙ্গে অনেক লেখকলেখিকাকে উঠতে পড়তেও দেখা গেল, কিন্তু সাহিত্যিকের সৃষ্টি যেখানে বাস্তবের প্রতি সজাগ দৃষ্টির সঙ্গে অন্তরের সত্য অনুভূতি মিলিয়ে তৈরি, সেখানে তার ভয়ের কারণ নেই। একদিন