পাতা:সাহিত্যে নারী ⦂ স্রষ্ট্রী ও সৃষ্টি - অনুরূপা দেবী.pdf/১৪৩

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
সাহিত্যে নারী ⦂ স্রষ্ট্রী ও সৃষ্টি
১২৩

“সন্ন্যাসিনী”, “শিখা”, “অর্ঘ্য”, “সিন্ধুগাথা”, “স্বদেশিনী” প্রভৃতি তাঁর বইগুলির মধ্যে যে ভাবমাধুর্য্য ও ভাষার সারল্য দেখতে পাই, তা’ আজকের দিনে দুর্লভ। রক্ষণশীল সম্ভ্রান্ত পরিবারের অন্তঃপুরবাসিনী নারী সম্পূর্ণ নিজের চেষ্টায় কতদূর উন্নতি করতে পারে, তিনি তাঁর উজ্জ্বল নিদর্শন। গদ্যে এবং পদ্যে তিনি সমান স্বাচ্ছন্দ্যের সঙ্গে রচনা ক’রে গেছেন। কালিদাসের কুমারসম্ভব বাংলায় অনুবাদ করে তিনি তাঁর সংস্কৃত ভাষার প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়েছেন। ১৮৮৪ খৃষ্টাব্দে তাঁর স্বামী নরেশচন্দ্র দত্তের মৃত্যুর পর থেকে ১৯২৬ খৃষ্টাব্দে তাঁর মৃত্যুর পূর্ব পর্যন্ত সাংসারিক শোক-সন্তাপের মধ্যেও গৃহকর্মের অবসরে সাহিত্যচর্চাই ছিল তাঁর একমাত্র সান্ত্বনা। তার লেখার একটু নমুনা দিচ্ছি:

“মাটিতে নিকানো ঘর,  দাওয়াগুলি মনোহর,
সমুখেতে মাটির উঠান।
খোড়ো চালখানি ছাঁটা,  লতিয়া করলালতা
মাচা বেয়ে করেছে উত্থান।
..শান্ত স্তব্ধ দ্বিপ্রহরে  গ্রাম্য মাঠে গরু চরে:
তরুতলে রাখাল শয়ান:
সরু মেঠো রাস্তা বেয়ে  পথিক চলেছে গেয়ে
মনে পড়ে সেই মিঠে তান।”

 “শুভসাধনা”, “প্রিয় প্রসঙ্গ”, “বিভূতি” “বীরকুমারবধ”, ‘কাব্যকুসুমাঞ্জলি’ এবং ‘কনকাঞ্জলি’ প্রভৃতির রচয়িত্রী মানকুমারী (১৮৬৩-১৯৪৩) এঁর পরবর্তী কবি। মানকুমারীর কবিতার বিষয়বস্তুর গণ্ডী আরও সঙ্কীর্ণ, কিন্তু অত্যন্ত সাধারণ বিষয়ও তাঁর আন্তরিক সমবেদনার স্পর্শে, তাঁর অকৃত্রিম শ্রদ্ধায় এবং