পাতা:সাহিত্যে নারী ⦂ স্রষ্ট্রী ও সৃষ্টি - অনুরূপা দেবী.pdf/১৫

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
৸৶৹

দেশ ভেদে এবং পারিপার্শ্বিক অবস্থাভেদে নারীর সাহিত্যিক প্রতিভা বিভিন্ন যুগে প্রশংসিত অথবা অবজ্ঞাত হয়েছে, কথনও সম্যক স্ফুর্তি পেয়েছে, কখনও অবরুদ্ধ এবং অপ্রকাশিত থেকে গেছে। বিভিন্নদেশে পুরুষের স্বাধীনতার হ্রাসবৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে নারীর স্বাধীনতার হ্রাসবৃদ্ধি ঘটেছে, উদারতা অনুদারতা সমাজে বেড়েছে কমেছে, সংস্কৃতির মান উঠেছে নেমেছে। কোনোযুগের নারীর বহু রচনা সাহিত্যক্ষেত্রে অমর হ'য়ে আছে, আবার কোনো যুগের নারীর অধিকাংশ রচনা বিস্মৃতির গর্ভে তলিয়ে গেছে। যুগভেদে একই দেশে নারী বেদমন্ত্র রচনা করেছে, অদ্বৈতবাদ প্রচার করেছে, আবার লেখাপড়া শিখলে নারী বিধবা হয়, এত বড় কুসংস্কারের কথা নিজেরাই প্রচার ও বিশ্বাস করেছে। আত্ম-প্রচারে কুণ্ঠা, অন্তঃপুরের অবরোধ, গৃহকর্মের অবসরাভাব এবং সামাজিক নানাবাধার জন্য বহু সুসাহিত্যিকা সাহিত্যক্ষেত্রে তাঁদের প্রতিভার উপযুক্ত পরিচয় রেখে যেতে পারেননি। পুরুষের পক্ষপাতিত্ব এবং নারীর সহজ সংস্কার দুই-ই অল্পাধিক পরিমাণে এ ক্ষেত্রে নারীকে বাধা দিয়েছে। তার কর্মক্ষেত্রের পরিধির ক্ষুদ্রতা মোটের উপর তার দৃষ্টিকে সঙ্কীর্ণ করেছে, তার চিন্তাশক্তিকে খর্বীকৃত করেছে, তাই পৃথিবীর মহাকাব্য রচয়িতাদের মধ্যে এবং সর্বশ্রেষ্ঠ দার্শনিকদের মধ্যে নারীর স্থান হয়নি; কিন্তু তার প্রকৃত কারণ শক্তির অভাব, না সুযোগের অভাব, তা নিয়ে মতভেদ আছে, সে তর্কের মীমাংসা কোনোদিন হবে কি না সন্দেহ। কারণ যাই হোক কার্যক্ষেত্রে আমরা দেখতে পাই শ্রুতি-স্মৃতির যুগ থেকে মুদ্রাযন্ত্রের যুগপর্য্যন্ত নারীর সাহিত্যসৃষ্টি কোনোদিন বন্ধ হয়নি। কখনো অম্ভৃণ ঋষিকন্যা বাগদেবীর কণ্ঠে সে নিজেকে বিশ্বব্রহ্মাণ্ডের নিয়ন্ত্রী ব'লে ঘোষণা করেছে, কখনো মৈত্রেয়ীর কণ্ঠে অমৃতত্বের পিপাসায় পার্থিব ঐশ্বর্যকে ধিক্কার দিয়েছে, কখনো বিদুলা, দ্রৌপদীর কণ্ঠে, দুর্গাবতী, চাঁদবিবি, সরলাদেবী, মাদাম চিয়াং কাইশেক, সরোজিনী নাইডুর কণ্ঠে পদাহত কাপুরুষকে রণ-হুঙ্কারে জাগিয়ে তুলে পৌরুষে উদ্দীপিত করেছে, কখনো শীলা, বিজ্জা, মারুলা, মোরিকা