পাতা:সাহিত্যে নারী ⦂ স্রষ্ট্রী ও সৃষ্টি - অনুরূপা দেবী.pdf/১৫৩

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
সাহিত্যে নারী ⦂ স্রষ্ট্রী ও সৃষ্টি
১৩৩

কাব্যগ্রন্থও ইতিমধ্যে প্রকাশিত হয়। শ্রীমতী ভুবনমোহিনী দেবী কর্তৃক সম্পাদিত ‘বিনোদিনী’ মাসিক পত্রিকা ১৮৭৪ সালে বা’র হয়ে দু’ বৎসর পরে বন্ধ হ’য়ে যায়। ১৮৭৫ খৃষ্টাব্দে সুরঙ্গিণী দেবীর ‘তারাচরিত’ নামক ঐতিহাসিক উপন্যাস প্রশংসা লাভ করে। তারপর স্বর্ণকুমারী দেবীর প্রথম রচনা “দীপনির্বাণ” প্রকাশিত হ’বার পর থেকে ঊনবিংশ শতাব্দীর শেষ পর্যন্ত বাংলার নারীরচিত সাহিত্যে তাঁর একাধিপত্যের যুগ ব’ললে অন্যায় হবে না। এডুকেশন গেজেটে এবং বামাবোধিনী পত্রিকায় ইতিপূর্বে বা এই যুগে যে সব নারী লেখিকা স্বনামে অনামে কবিতা লিখতেন তাঁদের সকলের নাম সংগৃহীত হয়নি, তবে কোন্নগরবাসিনী ‘জ্যোৎস্নাময়ী ঘোষ’ নাম্নী লেখিকার লেখা তখন সকলেরই খুব ভালো লাগত। মনীষী ভূদেব তাঁর গৃহকন্যাদেরও যেমন গদ্য-পদ্য রচনায় উৎসাহ দান ও সেই সব অবান্তর রচনা নিয়ে অসীম ধৈর্যের সঙ্গে তাদের সহায়তা করতেন, তেমনি অনাত্মীয়া মেয়েদের ভীরু প্রচেষ্টাকেও কোনো মতেই নিরুৎসাহিত করতেন না। এ বিষয়ে বামাবোধিনী পত্রিকার কাছেও মেয়েদের ঋণ সামান্য নয়। সে সময়ে প্রেম প্রণয়ের কথা নিয়ে কবিতা মেয়েরা সাধ্যপক্ষে লিখতেন না, লিখলেও তা’ নির্লজ্জ হ’য়ে ছাপাতেন না। শোকগাথা, ধর্মগাথা, ভাগবতভক্তির কাহিনী এই সমস্তই সাধারণতঃ তাঁদের লেখার মর্মকথা ছিল, তবে মিলনানন্দ ও বিরহ-ব্যাকুলতা যে তাঁদের লেখায় একেবারেই স্থান পেত না তা’ অবশ্য বলা যায় না। ও-বিষয়ে তো আমাদের দেশে আড়াল দে’বার সুযোগ কিছু কম ছিল না, শ্রীরাধিকার মুক্তামালা ছিঁড়ে ছড়িয়ে দিয়ে শ্যাম-দর্শন করার