পাতা:সাহিত্যে নারী ⦂ স্রষ্ট্রী ও সৃষ্টি - অনুরূপা দেবী.pdf/১৮

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

১৵৹

জড়িত ব'লে মনে করি, সমাজকে আনন্দ দেওয়া এবং পথনির্দেশ করাই তার প্রধানতম কাজ ব'লে বিশ্বাস করি। কবিরা নিরঙ্কুশ সে বিষয়ে সন্দেহ নেই, কিন্তু কবিরা মানুষ এবং সামাজিক জীব একথাও অস্বীকার করা মূঢ়তা। যে কাব্য সমাজের পক্ষে ক্ষতিকর, তা’ শ্রুতিমধুর হ'লেও কু-কাব্য। সাহিত্যে অধিকারীভেদ আছে, রুচিভেদ আছে, আঙ্গিকের ভেদ আছে, যুগভেদে দেশভেদে একই বই সুখপাঠ্য এবং অপাঠ্য বলে বিবেচিত হয়েছে, কিন্তু সর্বদেশকালের সাহিত্যিক বিচারে পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ সাহিত্যের মর্যাদা যে সমস্ত গ্রন্থ লাভ করেছে, সেই সব গ্রন্থে সমসাময়িক ইতিহাস, আনন্দ ও শিক্ষার উৎস একাধারে সম্মিলিত হয়েছে। বিশেষ ক'রে যে নারী গুহাবাসী বনচারী আদিমানবকে লজ্জা নিবারণের জন্য আচ্ছাদন ব্যবহার করতে এবং হিংসা নিবারণের জন্য ফলমূল আহার করতে শিখিয়েছিল, এককথায় সংযম ও সভ্যতা শালীনতা শিখিয়ে যে পশুকে মানুষ করেছিল, সাহিত্য-সৃষ্টির সময়ে আজ তার প্রতিনিধি যদি অসংযমের পরিচয় দেয়, সমাজকে বিপথে পরিচালিত করে, তবে বুঝতে হবে, সে তার মাতৃ-মাতামহীদের বহু সহস্র বৎসরের সাধনার উত্তরাধিকার হারিয়েছে, সে শুধু সমাজদ্রোহী নয়, আত্মঘাতিনী। আধুনিক নারীসাহিত্যিকদের মধ্যে অনেকেরই মননশীলতার ও শক্তির পরিচয় পাওয়া যায়, সেই সঙ্গে পরানুকরণস্পৃহা এবং অক্ষমতার পরিচয়ও অল্প পাওয়া যায় না। সংযমের ক্ষমতা যাতে সমাজের বৃহত্তর কল্যাণের পথে বাধা সৃষ্টি না ক'রে, এইটুকু তাদের কাছে আমার নিবেদন; অক্ষমের এবং পরানুকরণকারীদের রচিত সাহিত্য উপেক্ষা করাই শ্রেয়। নারী যেখানে নিজের মহত্ত্বে মাথা তুলে দাঁড়িয়েছে, সেখানে সকল দেশের পুরুষই তাকে শ্রদ্ধা নিবেদন করেছে। বিশেষ করে প্রাচীন ভারত নারীকে পুরুষের চেয়ে অনেক বেশী সম্মান দিয়েছিল, তার বহু প্রমাণ আছে। নারীর নিন্দাও