পাতা:সাহিত্যে নারী ⦂ স্রষ্ট্রী ও সৃষ্টি - অনুরূপা দেবী.pdf/১৯২

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
১৭২
সাহিত্যে নারী ⦂ স্রষ্ট্রী ও সৃষ্টি

সংবাদ যতখানি রাখি, ভারতবর্ষের বিভিন্ন প্রদেশের সাহিত্যের সম্বন্ধে তা’র দশ ভাগের এক ভাগ সংবাদও রাখি না। ঊনবিংশ শতাব্দীতে পাশ্চাত্ত্য সভ্যতার মহত্তম দান বাঙালীর চিন্তার ক্ষেত্রে সোনার ফসল ফলিয়েছিল, বাংলা সাহিত্য ভারতের অন্যান্য প্রাদেশিক সাহিত্যকে ছাড়িয়ে আজ বহু দূর অগ্রসর হয়েছে; তবে ভারতবর্ষের বিভিন্ন প্রদেশের অতীত সাহিত্যে অনেক বড় জিনিষ আছে—এ কথা অস্বীকার করা যায় না এবং সেই সব সাহিত্যে নারীর দানও উপেক্ষণীয় নয়। পূর্বেই বলেছি এ সম্বন্ধে আমাদের জ্ঞান অল্প, তবু যতটুকু সম্ভব আলোচনা ক’রব। বলা বাহুল্য খুব বেশী বিখ্যাত ব্যক্তি ছাড়া অন্যের নাম উল্লেখ করা আমার পক্ষে সম্ভব হবে না।

 বাংলার পাশেই আসাম। প্রাচীন আসামের নাম ছিল প্রাগ্‌জ্যোতিষপুর বা কামরূপ। পূর্বে সেখানে অসুরবংশীয় যে রাজার রাজত্ব করতেন, তাদের অন্তঃপুরে স্ত্রীশিক্ষার প্রসার ছিল; বাণরাজকন্যা ঊষা এবং তাঁর সখী চিত্রলেখার বৈদগ্ধ্যের পরিচয় আমরা মহাভারতের যুগেও পেয়েছি। মধ্যযুগে কামরূপের তন্ত্রবিদ্যা বাংলা দেশে যথেষ্ট প্রভাব বিস্তার করেছিল, কামরূপের ডাকিনীরা যে হতভাগ্য বাঙালী পুরুষদের ভেড়া বানিয়ে রাখত, তা’র মূলে তাদের অলৌকিক তন্ত্রমন্ত্র ছাড়া লৌকিক বৈদগ্ধ্য বিদেশীকে আকৃষ্ট ক’রতে কতটা সাহায্য করত তা’ আজ বলা সম্ভব নয়। বাংলা দেশের ঝাড়ফুঁক, সাপে কামড়ানো, ভূত ছাড়ানো প্রভৃতি পন্নীগ্রামের নানা গুরুতর ব্যাপারে আজও কামরূপের কামাখ্যার দোহাই অপরিহার্য। ধর্মমঙ্গলের যুগে গৌড়েশ্বরের বাহিনীকে যিনি সম্মুখ-সংগ্রামে বাধা দিয়েছিলেন