পাতা:সাহিত্যে নারী ⦂ স্রষ্ট্রী ও সৃষ্টি - অনুরূপা দেবী.pdf/২০৬

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
১৮৬
সাহিত্যে নারী ⦂ স্রষ্ট্রী ও সৃষ্টি - অনুরূপা দেবী

প্রিয়পাত্রী, দরিদ্র কবিদের আশ্রয়দাত্রী। তাঁর ‘মরীচী-পরিণয়’ কাব্য সে যুগের শ্রেষ্ঠ সমালোচকদের দ্বারা প্রশংসিত হয়েছিল। দুর্ভাগ্যক্রমে মোহনাঙ্গীর ‘মরীচী-পরিণয়’ আজ লুপ্ত হয়ে গেছে, অন্ততঃ এ পর্যন্ত তার কোনই সন্ধান পাওয়া যায় নি।

 এঁদের পরবর্তী প্রতিভাশালিনী তেলুগু লেখিকা ‘মুড্ডুপলনি’ অষ্টাদশ শতাব্দীতে তাঞ্জোরের রাজা প্রতাপ সিংহের সভায় নর্তকী ছিলেন। তাঁর ‘রাধিকাসান্ত্বনম্‌’ এবং ‘এলাদেবীয়া’ কাব্যে তাঁর পাণ্ডিত্যের পরিচয় পাওয়া যায়। ভাষার আড়ম্বর কোথাও কোথাও তাঁর ভাবকে ছাড়িয়া গেছে, কোথাও কোথাও কুরুচির পরিচয়ও আছে, তবু ‘মুড্ডুপলনি’কে অন্ধ্র দেশের সর্বশ্রেষ্ঠ কবিদের মধ্যে অন্যতমা ব’লে স্বীকার না ক’রে উপায় নেই।

 ঊনবিংশ শতাব্দীর সর্বশ্রেষ্ঠা তেলুগু লেখিকা ‘ভেস্কমাম্বা’ কুড্ডাপা জেলায় তারিগোণ্ডা গ্রামে মধ্যবিত্ত পরিবারে জন্মেছিলেন। অল্প বয়সে স্বামী হারিয়ে তিনি ঈশ্বরে চিত্ত সমর্পণ করেন, গ্রামের মন্দিরে দিনরাত আপন মনে বসে ধ্যান ধারণা করাই ছিল তাঁর কাজ। ধর্মচর্চার মধ্যে তিনি নিজের ব্যক্তিগত শোক ভোলবার পথ খুঁজে পেয়েছিলেন, তাঁর লেখায় তাই হতাশার বা বিষাদের সুর নেই, জ্বলন্ত বিশ্বাস এবং আত্মনিবেদনের জ্যোতিতে তাঁর রচনা সমুজ্জ্বল। গ্রামের কুৎসা-রটনাকারীরা শেষ পর্যন্ত তাঁর ধর্মচর্চার মধ্যে কু-অভিসন্ধি আরোপ করায় তিনি বিরক্ত হ’য়ে স্বজন-সমাজ ত্যাগ করে পুরাপুরি সন্ন্যাসিনী হলেন এবং ভেঙ্কটাচলের তীর্থে আশ্রয় নিলেন। তাঁর ‘ভেঙ্কটাচল-মাহাত্ম্য’ ‘মুক্তিকান্তিবিলাসম্‌’ এবং ‘ভাগবত’ ভক্তের অন্তরের শ্রদ্ধা দিয়ে লেখা বহুপ্রশংসিত কাব্য।