পাতা:সাহিত্যে নারী ⦂ স্রষ্ট্রী ও সৃষ্টি - অনুরূপা দেবী.pdf/২৪৯

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
সাহিত্যে নারী ⦂ স্রষ্ট্রী ও সৃষ্টি - অনুরূপা দেবী
২২৯

সৃষ্টি আজ স্বার্থান্ধ মানুষের লোভ-জর্জ্জরতায় ধ্বংস হ’তে বসেছে। বেশীদিন এই হিংস্র পাশবতা চলাতে দিলে, পৃথিবীর যে মূর্ত্তি প্রকট হবে, শ্বাপদসঙ্কুল অরণ্যের চেয়েও তা’ ভয়াবহ। সৃষ্টি কর্ত্তার সৃষ্টি করবার নিশ্চয়ই তা’ উদ্দেশ্য ছিল না!

 রুদ্রের প্রলয়-বিষাণ স্তব্ধ হোক। মহাপ্রকৃতি সু-ক্রিয়মাণা হোন!

 “কি পাইনি তার হিসাব মিলাতে’’ ভুলে গিয়ে, আচরণ দিয়ে, আদর্শ দিয়ে, মৃতসঞ্জীবনী মহাবাণী দিয়ে তাঁরা নিজ নিজ সমাজকে পূণ্যের সমাজ, ত্যাগের সমাজ, পবিত্রতার সমাজ, ধর্মের সমাজ তৈরী করতে বদ্ধপরিকর হোন। নারী পুরুষের যথাযথ সাম্য তাঁরা নিজ চরিত্রবলে জয় করে সংস্থাপিত করুন। জোর ক’রে, ভিক্ষা ক’রে, অ-দূরদর্শী আইন ক’রে তা লাভ করা যায় না। সে অধিকার হতে পারে;—সমান সম্পত্তি লাভের, সমান যৌন ভোগের, সমান উচ্ছৃঙ্খলতার। ক্লীবের সঙ্গে, দীনের সঙ্গে, না হয় নৃশংস-দানবের সঙ্গে ধ্বংস-শক্তির সমান অধিকার সে যেন পেতে চায় না,—সে যেন তা’ পায় না,—জোর ক’রে স্বার্থের খাতিরে তার মাথায় চাপিয়ে দিলেও সে যেন মাথা ঝেড়ে ফেলে দেয়,—যেন সে তা’ নেয় না। সে যেন খুঁজে পায় তার নিজের সত্যকার সত্তাকে, সে যেন তার পূর্ণ মহিমায় নব যুগের অরুণ-রাগ-বিমণ্ডিতা ঊষারূপে সমুদিতা হয়ে জগতের এই ব্যাত্যা-বিক্ষুব্ধ জীবন-সিন্ধুর প্রলয় অন্ধকার বিদূরিত করতে পারে, যেমন আদিম সৃষ্টিতে একদিন বিশ্বেশ্বরের বিশ্বসৃষ্টি সহায়িকা রূপে করেছিল! তাকেই বলি, নারী-জাগরণ,—নারী-প্রগতি,—অন্যথায় অধোগতি ও দুর্গতির চরম।