পাতা:সাহিত্যে নারী ⦂ স্রষ্ট্রী ও সৃষ্টি - অনুরূপা দেবী.pdf/২৫৫

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
সাহিত্যে নারী : স্রষ্ট্রী ও সৃষ্টি
২৩৫

দেবদেবীদের মধ্যে একটা বড় প্রভেদ আমাদের প্রথমেই চোখে পড়ে, সেটা এই যে,—ভারতের বাইরের দেবদেবীদের ব্যক্তিত্ব যেমন স্পষ্ট, পৃথক্‌ এবং সুনিদিষ্ট, ভারতের দেবদেবীদের ব্যক্তিত্ব কোনোদিনই তেমন নয়। গ্রীসের দেবরাজ-পত্নী হীরা, যুদ্ধ ও জ্ঞানদেবী আথেনা, প্রেমদেবী আফ্রোদিতি, শিকারের দেবী আর্তিমিস্ প্রমুখের জীবনকাহিনী বিভিন্ন, পার্থক্য সুনির্দিষ্ট এবং সুস্পষ্ট। ভারতের বৈদিক দেবী ইড়া, ভারতী, সরস্বতী, অদিতি, বাকদেবী, দুর্গা, গায়ত্রী, সাবিত্রী প্রমুখের পার্থক্য সে রকম সুস্পষ্ট নয়। কোথাও তাঁরা বিভিন্ন ন'ন, মূলে তাঁরা একই চিন্ময়ী শক্তির নামান্তর মাত্র। ঐশী শক্তির একত্বে বিশ্বাস, বহুর মধ্যে একের প্রকাশকে স্বীকার ও পূজা নিবেদন ভারতীয় সাধনার বৈশিষ্ট্য; তাই ভারতীয় চিন্তাধারা এককে বহুরূপে ভাবতে কোথাও কোনো বাধা পায় না, এর মধ্যে কোনো অসঙ্গতি লক্ষ্য করে না। আপাত-বিরোধী বহুর মধ্যে এককে উপলব্ধি করা তার কাছে স্বভাবসিদ্ধ।

 ভারতবর্ষের বৈদিক সাহিত্যকে পৃথিবীর প্রাচীনতম সুলিখিত সাহিত্য বলা যেতে পারে। বেদের দেবতা মোট তেত্রিশ জন[১] ব’লে উল্লেখ থাকলেও যোগ করলে তাঁদের সংখ্যা অনেক বেশী হয়, কারণ একই দেবী কোথাও তিন নামে, কোথাও পাঁচ নামে বিভিন্ন রূপে পূজা পাচ্ছেন। দু'একটা নমুনা দিই—ইড়া দেবী মনুর কন্যা এবং পুরুরবার মা, ভরত বংশের আদি মাতা বা কুলদেবতা বলে তিনি ভারতী নাম নিলেন; এ দিকে পুণ্যতোয়া সরস্বতী নদী তার তীরবাসী ঋষিগণের কৃতজ্ঞ চিত্তের সমর্থন


  1. যেস্থ ত্রয়শ্চ ত্রিংশশ্চ।