পাতা:সাহিত্যে নারী ⦂ স্রষ্ট্রী ও সৃষ্টি - অনুরূপা দেবী.pdf/২৬

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
সাহিত্যে নারী : স্রষ্ট্রী ও সৃষ্টি

পারগা এবং যোগসিদ্ধা ছিলেন। পঞ্চশিখশিষ্য রাজর্ষি ধর্মধ্বজ জনককে পরীক্ষা করবার জন্য তিনি যোগবলে তাঁকে বশীভূত ক'রে তাঁর দেহমধ্যে প্রবিষ্ট হয়েছিলেন এবং তর্কের দ্বারা তাঁকে পরাজিত করেছিলেন। ছবির পর ছবি চোখের ওপর ভেসে ওঠে। সহস্র সহস্র বেদজ্ঞ ব্রাহ্মণের সম্মুখে দৃপ্তভঙ্গিমায় দাড়িয়ে যেদিন ব্রহ্মবাদিনী গার্গী সে যুগের অপরাজেয় পণ্ডিত দার্শনিকপ্রবর মহর্ষি যাজ্ঞবল্ক্যকে জগতের সর্বশ্রেষ্ঠ জ্ঞানের,—ব্রহ্মজিজ্ঞাসার,চরমমীমাংসার জন্য তর্কযুদ্ধে আহ্বান করলেন, সেদিন কী দিন! সেদিন শ্রেষ্ঠত্বাভিমানী পুরুষের সমস্ত পৌরুষগর্ব সেই জ্ঞানগরীয়সী কুমারীর তর্কপ্রবাহে ভেসে যাবার উপক্রম হয়েছিল। সেদিনের সভায় শেষ পর্যন্ত যাজ্ঞবল্ক্যকে ধমক দিয়েই গার্গীকে নিরস্ত করতে হয়, বিচারে পরাজিত ক'রে নয়। এর পর আবার আর এক দৃশ্য। মহর্ষি যাজ্ঞবল্ক্য ভোগৈশ্বর্য্যে বীতস্পৃহ হয়ে প্রব্রজ্যা নেবেন, দুই পত্নীকে তাঁর সমস্ত সম্পত্তি ভাগ করে দিয়ে যেতে চান। যিনি একদিনের তর্কযুদ্ধে একটি রাজসভায় সহস্র সুবর্ণমণ্ডিতশৃঙ্গ ধেনুলাভ করেন, তার আজীবনসঞ্চিত সম্পত্তি নিতান্ত অল্প ছিলনা; কিন্তু তাঁর ব্রহ্মবাদিনী পত্নী মৈত্রেয়ীও সামান্যা নারী ন'ন, তিনি আশৈশব ভোগৈশ্বর্য্যের মধ্যে লালিত, রাজকন্যা হয়েও স্বেচ্ছায় কৃচ্ছ্রব্রতা অরণ্যচারিণী ঋষিপত্নী হয়েছিলেন। তিনি কৌতুকচ্ছলে স্বামীকে প্রশ্ন করে বসলেন;“এই সমস্ত সম্পত্তি দিয়ে কি আমি মৃত্যুকে অতিক্রম করতে পারব?” মহর্ষি স্বীকার করলেন, “না, তা তুমি পারবে না।” তখন মৈত্রেয়ীর দ্বিতীয় প্রশ্ন এল; “যেনাহম্ নামৃতা স্যাম্ কিমহম্ তেন কুর্য্যাম্?” এত বড় প্রশ্ন