পাতা:সাহিত্যে নারী ⦂ স্রষ্ট্রী ও সৃষ্টি - অনুরূপা দেবী.pdf/২৮৭

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
সাহিত্যে নারী : স্রষ্ট্রী ও সৃষ্টি
২৬৭

না, তাও ওতে দেখা যায়। ‘মায়াবিনী রাণী’ একটা জ্বলন্ত দৃষ্টান্ত! ‘পারস্য উপন্যাসে’ নারীর অ-কল্যাণী মূর্তিই আমরা বড় বেশী দেখি, তবে সর্বদেশে সর্বকালে ও সবজাতির মধ্যেই ভালমন্দ পাশাপাশি বর্তমান আছে। সমাজ-পরিস্থিতি যখন যেরূপ থাকে, ভাল বা মন্দের সংখ্যার হ্রাস-বৃদ্ধি হয় মাত্র।

 মহাভারতের বিরাট সমাজে বহু রাজবংশ ব্রাহ্মণকুল এবং আর্য্যতরেয় জাতির ঐতিহাসিক ও সমাজিক চারিত্রিক পরিচয় আমরা পেয়েছি। কিন্তু সে যুগ রামায়ণের যুগের চেয়েও রূপকের জটিল জালে সমধিক কুহেলিকাচ্ছন্ন। সত্যবতীর জন্ম ও কুন্তীর মাতৃত্ব একান্তই অবিশ্বাস্য! সেদিনে এবং তার বহু দিন পরেও এমন কি, এই সেদিনেও শক্তিমানের জন্মকথা কোথাও প্রায় নৈসর্গিক আকারে থাকতে পায়নি!

 দেবতা ও ঋষি মানব ও মানবীকে তাঁদের স্বেচ্ছা-সুখে শাপ, বর এবং ত্যাগ গ্রহণ যথেচ্ছভাবেই করে গেছেন দেখা যায়। ঐ উদ্ভট ব্যাপারগুলি যদি সত্য হ'তো, তা হলে তা'কে লুকিয়ে রাখাই হ'তো স্বাভাবিক। সগর্বে সুপ্রচারিত করা হ'ত না। পূর্ণ-যৌবনা দ্রৌপদীর যজ্ঞকুণ্ডের আহৃতাগ্নির মধ্য থেকে জন্মও যেমন বিশ্বাস্য, পঞ্চপতিত্বও তেমনি প্রামাণ্য! একটা মানতে গেলে আর একটাকে ছাড়া চলে না। দেখা যায় জ্যেষ্ঠ ভ্রাতা যুধিষ্ঠিরেরই ধর্মপত্নী তিনি। ‘ভিক্ষান্নের মত’ কুরুরাজবংশের শ্রেষ্ঠ স্থানীয়রা তিব্বতীয় বর্বর প্রথা গ্রহণ করলেও প্রবল সমাজ ও অন্যান্য রাজন্যবর্গ তা মেনে নিতেন না। বিশেষতঃ অতবড় শত্রুপক্ষ যেখানে বর্তমান। তবে দ্রৌপদী যে কবির একটি অতুলনীয় নারীসৃষ্টি একথা একটুও অত্যুক্তি