পাতা:সাহিত্যে নারী ⦂ স্রষ্ট্রী ও সৃষ্টি - অনুরূপা দেবী.pdf/২৯১

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
সাহিত্যে নারী : স্রষ্ট্রী ও সৃষ্টি
২৭১

রয়েছে, অতটা হর্ষোচ্ছ্বাসিত হয়ে “আর্য্যপুত্র বলে সম্বোধন করাটা ত’ ঠিক হয়নি! তখন যেন ভেবে চিন্তেই বল্লেন, “দিট্টিআ অপরিহীন রাঅ ধর্মোকখু সো রাঅ।” “সেই রাজার রাজধর্ম পালনের ব্যতিক্রম হয়নি।”

 এখানেও নারী চিত্তবৃত্তির কিরূপ গূঢ় রহস্যময় পরিচিতি সূক্ষ্মদৃষ্টি কবির দ্বারা সম্ভবপর হয়েছে। যার রাজধর্মের অমোঘ দণ্ডতলে নিজে তিনি পিষ্ট হচ্ছেন, তার সেই ধর্মপালনে যে তিনি বিন্দুমাত্র ত্রুটি করছেন না, এই অভিব্যক্তিতে শুধু অভিমান প্রকাশই নয়, আত্মসন্ত্বনাও প্রচুরতর রূপেই নিহিত রয়েছে।

 জননী ধরিত্রীও একবার তাঁর নির্যাতিতা দুহিতাকে;— “হা আর্য্যপুত্রকে মনে পড়িল”, এই খেদোক্তি শুনে সকোপে ধমক দিয়েছিলেন;—“আঃ কস্তবার্য্যপুত্র”?

 “কে তোর আর্য্যপুত্র?”

 পঞ্চবটীর পূর্বস্মৃতি স্মরণে শ্রীরামচন্দ্র “হা’দেবি দণ্ডকারণ্যবাসপ্রিয়সখি!” বলে অবসন্নবৎ পতিত হ'লে বিপদ আশঙ্কিতা সীতা তমসার চরণ ধরে কাতর হয়ে বলে উঠেছেন;—“ভগঅদে তমসে! পরিত্তাহি পরিত্তাহি জিআয়োত অজ্জউত্তং।” “ভগবতী তমসে! আর্য্যপুত্রকে বাঁচাও বাঁচাও।”

 আর তখন ‘রাজা’ বলবার কথা মনে পড়েনি। পরক্ষণেই সীতা হস্তস্পর্শে সম্বিৎ প্রাপ্ত রামচন্দ্রের নিকট থেকে দূরে সরে যাচ্ছেন, সন্দিগ্ধ অভিমানে বলছেন, “ভগবতি তমসে! এস আমরা সরে যাই, বিনা অনুমতিতে আমি তার সম্মুখবর্তিনী হয়েছি দেখলে মহারাজা আমার প্রতি কুপিত হবেন।”