পাতা:সাহিত্যে নারী ⦂ স্রষ্ট্রী ও সৃষ্টি - অনুরূপা দেবী.pdf/২৯২

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
২৭২
সাহিত্যে নারী : স্রষ্ট্রী ও সৃষ্টি

 এখানে আবার স্বামীর রাজপদটাই প্রবল অভিমান মিশ্রিত হয়ে দেখা দিল, যে রাজপদ তাঁকে তাঁর থেকে বিযুক্ত করেছে তার প্রতি তাঁর স্বতই একটা তীব্র অভিমান থাকা স্বাভাবিক। রামচন্দ্রকে ‘প্রিয়ে জানকি!’ বলে শোক করতে দেখেও অসহায় অভিমানে তীব্র করেই বলেছিলেন,—“আর্য্যপুত্র! নিশ্চয়ই এ অ-সদৃশ কথা সেই সেই ব্যাপারের পর,”—এই কথা কয়টি সতী স্ত্রীর একান্ত সুসঙ্গত লজ্জাভিমান-প্রণোদিত, কিন্তু স্বামীকে 'প্রিয়ে জানকি!’ উচ্চারণ করতে শুনেই ‘মহারাজা’ ‘আর্য্যপুত্রে' পুনঃপ্রত্যাবর্তন করেছে। আবার নিজের অভিমানকে ধিক্কার দিয়ে সাশ্রুনেত্রে বলে উঠেছেন;—

 “হায়! আমি বজ্রময়ী, জন্মান্তরে দুর্লভ এমন প্রিয়ভাষী স্নেহময় আর্য্যপুত্রের প্রতি কি নির্দয় হলেম!”

 সংস্কৃত কাব্য-নাটকের চরিত্র নিয়ে আলোচনা দু'চার কথায় করা যায় না। এই সব অমূল্য রত্নরাজি সদৃশ চরিত্ররত্নের বিশ্লেষণ আবহমান কাল ধরে অসংখ্যবার হয়ে গেছে, আরও হবে, আমি শুধু এইটুকুই বলবো যে নারী চরিত্র সংগঠনে বিশ্লেষণে দূরদর্শী ও মনীষী পুরুষ কবিরা যে অদ্ভুত সূক্ষ্ম দৃষ্টির পরিচয় রেখে গেছেন, যুগযুগান্ত ধ'রেই লোক তার অনুবর্তন করতে বাধ্য হবেই হবে।

 ‘অভিজ্ঞান শকুন্তলম’ কাব্যেও কবির সূক্ষ্ম দৃষ্টি যথাযথ চরিত্র সংগঠন কার্যে নিপুণতার পরিচয় দিয়ে দেখিয়েছেন, তিনটি তরুণী নারীর মধ্যে অপ্সরা-সম্পর্কিতা শকুন্তলাই সংযমচ্যূতা হয়েছিলেন, মুনিকন্যাদয় সুরূপ রাজার প্রতি প্রেমাসক্ত হননি।

 রক্তসম্পর্ক যে কত প্রবল ঐ ইঙ্গিতেই তা’ পরিস্ফুট হয়েছে। অপ্সরীকন্যা বলে তার এই সংযমহীনতা একথা স্পষ্ট