পাতা:সাহিত্যে নারী ⦂ স্রষ্ট্রী ও সৃষ্টি - অনুরূপা দেবী.pdf/২৯৪

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
২৭৪
সাহিত্যে নারী : স্রষ্ট্রী ও সৃষ্টি

নবমল্লিকা দেখবার প্রয়োজন নেই, তোমার হাসি মুখই আমার পরাজয় সূচিত করছে!” এমন কি স্বামীকে অন্যাসক্ত জেনে কুপিত হলেও তৎক্ষণাৎ মুখ নত করে আত্মগোপন ও বাষ্প ব্যাকুল নেত্রকে অসীম মনোবলে শুষ্ক করে নে'ন। কটূকথা ওষ্ঠাধর ভেদ করে না। ঈষৎ ভেদকারী দৃষ্টিপাত মাত্র ক'রেই মাথা ধরার ছল করে সরে চলে যান। এ চরিত্র কাব্য ছেড়ে জগতেই দুর্ল্লভ! এমন আত্মদমনশীল, ধৃষ্টতায় উপেক্ষাকারিণী, অনুগ্রহপরায়ণা পরিজনবৎসলা মানুষী-দেবী,—যাঁর চরণ স্পর্শ করে পরিজনেরা শপথ গ্রহণ করে;—সূক্ষ্মদৃষ্টি দিয়ে না দেখতে জানলে এ চরিত্র সৃষ্টি করা যায় তার পক্ষে সম্ভবপর নয়।[১]

 তবে কথা এই যে এ চরিত্র শ্রীহর্ষের নিজস্ব পরিকল্পনা নহে, তৎপূর্ববর্তী মহা কবিদের পদাঙ্কানুসরণ প্রচেষ্টা তাঁর প্রত্যেক চরিত্রেই পরিস্ফুট এবং হয়ত সেটা একেবারেই অসঙ্গত ব্যাপারও নয়, যুগ-পতিদের কর্ম-প্রভাব মানুষের জীবনে এবং যুগকবিদের কাব্য-প্রভাব পরবর্তীদের রচনার মধ্যে জ্ঞাতে অথবা অজ্ঞাতে ছায়াপাত করবেই। মহাকবি ভাসের ‘স্বপ্ন বাসব দত্তা’র সুস্পষ্ট আভাষ আমরা পরবর্তী মহাকবি কালিদাসের ‘মালবিকা অগ্নি মিত্রে’ দেখতে পাই। আবার কালিদাসের সঙ্গে শ্রীহর্ষকবি ‘ছায়েব’ অনুবর্তন করতে বাধ্য হয়েছেন। ‘মালবিকা' 'ধারিণী দেবী’ প্রভৃতি ‘রত্নাবলী’তে আরও বিকাশ প্রাপ্ত হলেও ভিতরের কাঠামো সেই একই। অথবা এই সব আর্য্য সমাজের আদর্শ নারীচরিত্র স্বাভাবিক ক্রমেই কতকটা সমপর্যায়ে এসে পড়তে বাধ্য, যদি একই বিষয়বস্তু নিয়েই কবি তাঁদের


  1. বিবিধ প্রবন্ধ প্রথম ভাগ—ভূদেব মুখোপাধ্যায়।