তার উপর যদি সমানুভূতিপূর্ণ চিত্ত নিয়ে প্রিয় সখি পাশেই ক্ষুব্ধ বিস্ময়ে দাঁড়িয়ে থাকে, তাহলে বলরামদাসের রাধা কি করে হতাশচিত্তে না বলেন;—
“ত্যজ সখি নিঠুর নটবর আশ,
যামিনী শেষ হ’লে সকলই নৈরাশ,
তাম্বুল চন্দন গন্ধ উপহার, দূরহ ডারয় যামুন পার।”
তা’ শ্রীকৃষ্ণকীর্তনের রাধাও ঠিক এই কথাই তো বলেছেন;—
“এ ধন যৌবন সকলি অসার, ছিণ্ডিয়া ফেলব গজ মুকুতার হার,
মুছিয়া ফেলব সিঁথির সিন্দুর।” ইত্যাদি
আর ঐ সব প্রিয় সম্ভার ত আর সহজে সংগৃহীত হয়নি, বর্তমান কালের ব্ল্যাক্-মার্কেটে কেনার মতই ‘কত না যতনে কতনা গোপনে’ জোগাড় করে আনতে হয়েছিল! কাজেই একান্ত অসময়ে আসা প্রিয়তমকে বাহুবন্ধনে গ্রহণ না করে বলরাম দাসের রাধা যদি আশাহতার মর্মজালায় প্রজ্জ্বলিত হয়ে তীব্রকণ্ঠে বলেই থাকেন;—
“ধিক রহুঁ মাধব তেহারি সোহাগ, ধিক্ রহুঁ যো ধনী তাহে অনুরাগ”—তো খুবই অন্যায় করেন নি!
আবার এতেই কি মেটে! এত আর শুধু মুখের প্রেম নয়, প্রাণের যে! তাই রাইয়ের এখন;—
“মান গিয়ে বিরহ এলো, ধনীর কৃষ্ণ মুখ মনে প’লো’’
কিন্তু তখন ও এই অভিমানিনীর মদীয়তার শেষ হয়নি। সখিদের গঞ্জনার উত্তরে চন্দ্রশেখরের রাধা ভ্রুকুটিবদ্ধ ললাটে ঠোঁট ফুলিয়ে প্রত্যুত্তর দিচ্ছেন;—