পাতা:সাহিত্যে নারী ⦂ স্রষ্ট্রী ও সৃষ্টি - অনুরূপা দেবী.pdf/৩১০

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
২৯০
সাহিত্যে নারী ⦂ স্রষ্ট্রী ও সৃষ্টি - অনুরূপা দেবী

দেখেন নি। রাজ্যেশ্বর পুত্রকে তিনি সন্ন্যাস নিতে বাধ্য করেছিলেন, তার মধ্যে মদালসা বা ধ্রুব-জননী সুনীতির মত কোন মহৎ আদর্শ ছিল না। তিনি সুপণ্ডিতা ছিলেন এবং প্রভুত্বের ও প্রবল ইচ্ছাশক্তির জোরে অনিচ্ছুক পুত্রকে রাজ্যত্যাগ করিয়ে হাড়ির অনুচর করেছিলেন, কিন্তু পাঠকের শ্রদ্ধা আকর্ষণ করতে পারেন নি। বিভিন্ন মঙ্গলকাব্যের দেবীচরিত্রগুলিকে যদি নারীচরিত্র রূপে ধরা হয়, তা’হলে আমাদের অধিকাংশ ক্ষেত্রেই হতাশ হতে হবে। দুর্গা, মনসা, মঙ্গলচণ্ডী প্রভৃতি দেবীরা সকলেই ছলে বলে কৌশলে অন্যের ভক্তকে ভাঙ্গিয়ে নিজের পূজা আদায় করতে ব্যস্ত। তার জন্য কোন কিছুতেই তাঁদের আটকায় না। দেবীর ভক্ত মহাপাপী হলেও পার পেয়ে যায় আর যিনি তাঁর পূজা দিতে অস্বীকৃত হন, তিনি ভালো লোক হলেও তাঁর দুর্গতির পরিসীমা থাকে না। এই যুগের মানবী চরিত্রের মধ্যে সবচেয়ে বিখ্যাত কবিকঙ্কণের চণ্ডী-কাব্যের নায়ক কালকেতুর পত্নী ফুল্লরা এবং ধনপতির পত্নী লহনা ও খুল্লনা, মনসামঙ্গলের লক্ষ্মীন্দরের পত্নী বেহুলা। ধর্মমঙ্গলের লাউসেনের মা রঞ্জাবতী, পত্নী কলিঙ্গা এবং কানাড়া, কানাড়ার দাসী ধূমণসী এবং কালুডোমের পত্নী লখাই,—প্রভুর কার্যে যে দুই পুত্র পতি এবং অবশেষে নিজেকে উৎসর্গ করেছিল, এই সকল চরিত্রগুলির মধ্যে সাহিত্যের ভিতর দিয়ে তাৎকালীন সমাজের চিত্র অনেকটাই পাওয়া যায়, তবে অতিরঞ্জনের একটা বিশেষ ছাপ প্রত্যেকটি চরিত্রেই পরিব্যাপ্ত হয়ে আছে; যা হলে ভালই হতো, তবে হয়েছিল কি না;—অর্থাৎ যতটা বলা হয়েছে ঠিক ততটাই হয়েছিল কি না;—তাতে সন্দেহ করবার যথেষ্ট কারণ