পাতা:সাহিত্যে নারী ⦂ স্রষ্ট্রী ও সৃষ্টি - অনুরূপা দেবী.pdf/৩১২

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
২৯২
সাহিত্যে নারী ⦂ স্রষ্ট্রী ও সৃষ্টি - অনুরূপা দেবী

মর্মব্যথার স্বতঃস্ফূর্ত্তি। জগতের সমস্ত প্রিয় বিরহিতদের অন্তর্বেদনা নিয়ে এরাও সৃষ্ট হয়েছে।

 শচীনন্দন দাসের রাধা সখির কাছে তাঁর বিরহী জীবনের বারমাসের অসহ্য কষ্ট ব্যক্ত করছেন, তার সবটাই নয়, আমরা এখানে সামান্য একটুখানি মাত্র তুলে দিচ্ছি; শুনলে আপনারাও সহানুভূতি না ক’রে থাকতে পারবেন না;—

“ইহ মত্ত দাদুরী নোল, দামিনী চমকি ঝলকিত কাঁতিয়া,—
মেহ বাদর বরিখে ঝরঝর, হামারি লোচন ভাতিয়া
দেই ছোড়ি নহি, বাহিরায় সো মুখ চাঁদ অবমেহি পেখিয়া।”

 সীতার বারমাস্যায় বনবাসের ক্লেশ বর্ণিত হয়েছে, এটি ঠিক অন্যান্য বারমাস্যার লক্ষ্মণাক্রান্ত নয়। সীতা দেবী সখিজনের কাছে অতীত দিনের বনবাসক্লেশের কথা বলছেন;—

“বৈশাখ মাস হইল বাড়িল দিন আর,—
প্রখর হইল রৌদ্র অতি খরতর।
চলিতে না পারি দেখি কমললোচন,
বৃক্ষ নিচে বৈসে কান্দে দুঃখের কারণ।”

 শ্রীমন্ত সদাগরের সিংহলদেশীয়া পত্নী সুশীলা তাঁহাকে গৃহ প্রত্যাবর্তনে নিবৃত্ত করবার জন্য বারমাসের সুখভোগের নানা প্রলোভন দেখিয়েছিলেন;—

“বৈশাখে চন্দনাদি তৈল দিব সুশীতল করি,
সাঙ্গালি গামছা দিব ভূষণে কস্তুরি।
জৈষ্ঠে পুষ্পশয্যা করে দিব চাঁদোয়া টাঙ্গায়ে
হাস্যপরিহাসে যাবে সজনী গোঙায়ে।”