পাতা:সাহিত্যে নারী ⦂ স্রষ্ট্রী ও সৃষ্টি - অনুরূপা দেবী.pdf/৩২

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
১২
সাহিত্যে নারী : স্রষ্ট্রী ও সৃষ্টি

আত্মপ্রবঞ্চক লাঞ্ছিতকে ধুলিশয়নের তামসিকতা থেকে সুতীব্র ভাষার কষাঘাতে জাগিয়ে তুলছে। তিনি ব'লছেন, “আপনার আত্মাকে অপমান কোরো না, নিজেকে অল্প দিয়ে ভ’রতে যেয়ো না, পরম কল্যাণের জন্য মনকে প্রস্তুত করো, ভয় কোরো না। ক্ষুদ্র নদী অল্প জলেই ভ'রে যায়, ইঁদুরের অঞ্জলি অল্প জিনিষেই পূর্ণ হয়, কাপুরুষেরাই সহজে এবং অল্পে সন্তুষ্ট হয়।...বজ্রাহতের মতো পড়ে আছ কেন? কাপুরুষ, ওঠো, শত্রুর দ্বারা নির্জিত হয়ে ঘুমিয়ে থেকো না।...হয় আপনার বীর্যকে জাগিয়ে তোলো, না হয় কল্যাণময় গতি (মৃত্যু) প্রাপ্ত হও।” (শুধু সংখ্যা বাড়াবার জন্য পুরুষ বা স্ত্রীলোক হ'য়ে লাভ নেই) “যারা শুধু সংখ্যা বাড়ায়, তারা পূরুষও নয়, স্ত্রীলোকও নয়।” সুদীর্ঘ চার অধ্যায় ধ'রে বিদুলার এই জ্বালাময়ী ভাষা চলেছে, পৃথিবীর সাহিত্যে বীররসের এ এক অপূর্ব সম্পদ। এই ভাষারই প্রতিধ্বনি আমরা শুনতে পাই সভামধ্যে অপমানিতা দ্রৌপদীর মুখে;— “ধিক ভীমের বলকে, ধিক অর্জুনের গাণ্ডীবকে, এই ক্ষুদ্রজনেরা আমায় অপমান করছে, এঁরা কেমন করে সহ্য করছেন?” শুধু রুদ্র ভাব নয়, শুধু ক্ষমা নয়, সময়বিশেষে উপযুক্ত ব্যবহারই ছিল দ্রৌপদীর নীতি। তাঁর গভীর রাজনীতিজ্ঞানের পরিচয় আমরা তাঁর এই সব কথায় পাই: “ক্রমাগত তেজ ভালো নয়, সব সময়ে ক্ষমা ভালো নয়...উপযুক্ত সময় বুঝে মৃদু বা তীক্ষ্ণ ব্যবহার করবে...মৃদুতার দ্বারা দারুণ অদারুণ সকলকেই জয় করা যায়, মৃদুর অসাধ্য কিছু নেই, সুতরাং মৃদুরই শক্তি বেশী।...কিন্তু তেজেরও সময় এলে তেজ প্রয়োগ করা অবশ্য কর্তব্য।” দ্রৌপদী শুধু তেজস্বিনী এবং রাজনীতিতে পারদর্শিনী ছিলেন