পাতা:সাহিত্যে নারী ⦂ স্রষ্ট্রী ও সৃষ্টি - অনুরূপা দেবী.pdf/৩২৬

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
৩০৬
সাহিত্যে নারী ⦂ স্রষ্ট্রী ও সৃষ্টি - অনুরূপা দেবী

এই সব কল্যাণী জননীকে আমরা ঘরে ঘরে নিত্য প্রত্যক্ষ করছি, কিন্তু অতি পরিচয়ে তিনি প্রায় অপরিচিত হয়েই রয়েছেন। আশ্চর্য এই যে, এই সকল অতিপরিচিত মাতৃচিত্রগুলি পুত্র রচিত, মাকে চিনতে তাদের একটুও ভুল হয়নি।

“ক্ষীর ননী ছানা সর, আনিয়াছে থরে থর,
আগে দেই রামের বদনে,
পাছে কানাইয়ের মুখে, দেয় রাণী মহাসুখে,
নিরখিয়ে চাঁদমুখপানে।”

কবিশেখরের রাধাও পক্কান্ন পাঠিয়েছেন, যশোদা মুদ্‌গসূপ, তা’তে মরিচের সুখদ ঝাল দেওয়া, আরও কি কি সব এবং চিনি-কদলীসংযুক্ত ক্ষীর সরের সঙ্গে সেগুলিও প্রেরিকার পরিচয় সহিত সকৃতজ্ঞ চিত্তে অনুরোধ করে করে ছেলেকে খাওয়াচ্ছেন। সেজ-বিছানা পেতে, কর্পূর তাম্বুল দিয়ে ছেলেকে সকাল সকাল ঘুম পাড়াচ্ছেন, আবার যে ভোরের বেলায় শ্রীদাম সুদাম দাম বসুদাম ডাকতে আসবে, বলবে;—

“বনে গেল ধেনু, আয়রে কানু বেণু বাজায়ে।”

 মায়ের নজর যে সবদিকে সমান সজাগ! পরিতাপের বিষয় প্রিয়-বিরহিতার বিলাপ-উচ্ছ্বাসে যে বৈষ্ণবসাহিত্য কলকল্লোলিত, মায়ের দুঃখ তাঁরাই বা তেমন করে কই বুঝেছেন? পরবর্তীরা ভাঙ্গাবুকের সেই অশ্রান্ত রোদনে তবু একটু কান পেতেছিলেন বলেই মধুকান তবু বলতে পেরেছেন;—

“গোকুলেতে তুমি যারে ডাকতে মা বলে,
সে কান্দে আজ পথের ধূলায় কৃষ্ণ কই বলে,