পাতা:সাহিত্যে নারী ⦂ স্রষ্ট্রী ও সৃষ্টি - অনুরূপা দেবী.pdf/৩২৮

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
৩০৮
সাহিত্যে নারী ⦂ স্রষ্ট্রী ও সৃষ্টি - অনুরূপা দেবী

“নে’রে খা’রে দে’রে বদনে,   তো’ বিনে আর খাই নাই,
বনফল শুষ্ক হ’ল বনে।”

 অবশেষে মৃতকল্পা যশোদার পুত্রবিরহদাবাগ্নির অনির্বাণ দহনে দগ্ধীভূতা মুমূর্ষু জননীর শেষ আর্ত মর্মর; এ কি শুধু একা তাঁরই বুকফাটা রক্তবিন্দু, না সমূদয় নির্যাতিতা কৃতঘ্ন-পুত্রজননীদের? এই যে কথাগুলি অতুলকৃষ্ণ মিত্রের যশোদা বলেছেন;—

“এলি কি দেখিতে গোপাল এত দিনের পরে?
তবে দেখ দেখ চেয়ে দেখ ওরে যাদুমণি!
ভূমিতে পড়িয়ে রে তোর যশোদা জননী।”

মধু কানের যশোদা অঝর্‌ঝরে কাঁদেন;—

“আর কি আসিবে সে নীলমণি?
মা বলে আসিবে কোলে, খাওয়াইব ক্ষীর-ননী।”

 মায়ের প্রাণের আশা যে যায় না। নইলে ইতিপূর্বেই ত ঐ কবির শ্রীকৃষ্ণ ব্রজবাসী সাথীদের কাতর আবেদনের প্রত্যুত্তরে স্পষ্ট ভাষাতেই বলে চুকিয়েছেন;—

“আর ত’ ব্রজে যাব না ভাই, যেতে প্রাণ নাহি চায়,
ব্রজের খেলা ফুরিয়ে গেছে, তাই এসেছি মথুরায়।
বাপ পেয়েছি, মা পেয়েছি, ছেলেখেলা ভুলে গেছি,
তোমরা ক’জন মা বলে ভাই, ভুলিয়ে রেখ মা যশোদায়।”

 জগতে এমনিই হয়! মা চিরদিন মা-ই থাকে, তার কোন পরিবর্তন হয় না; কিন্তু সন্তান ততদিনই মাতৃ-অনুগত থাকে যতদিন তার মাকে প্রয়োজন। কিন্তু তাই বলেই মায়ের প্রতি তারও টান যে বড় অল্প নয়, সমস্ত বাংলাসাহিত্য প্লাবিত করে