পাতা:সাহিত্যে নারী ⦂ স্রষ্ট্রী ও সৃষ্টি - অনুরূপা দেবী.pdf/৩৩

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
সাহিত্যে নারী : স্রষ্ট্রী ও সৃষ্টি
১৩

না; ধর্মজ্ঞা এবং ধর্মদর্শিনী ছিলেন, নিরীশ্বরবাদ, হঠবাদ প্রভৃতির সমালোচনায় তার গভীর শাস্ত্রজ্ঞানের পরিচয় পাই। সে যুগের আর একজন মহীয়সী মহিলা ধৃতরাষ্ট্রপত্নী গান্ধারী। এই ধর্মপ্রাণ বিদুষী নারীর তুলনা—শুধু ভারতে নয়—পৃথিবীর ইতিহাসে দুর্লভ। অন্ধ স্নেহমুগ্ধ স্বামীর প্রশ্রয় পেয়ে পুত্র দুর্যোধন সুসমৃদ্ধ কৌরবরাজপরিবারকে দ্রুতবেগে কি নিদারুণ পরিণতির দিকে নিয়ে চলেছে তা তিনি দিব্যচক্ষে দেখতে পেয়েছিলেন, তাই সকলের কল্যাণ কামনায় মাতা হ'য়ে পুত্রকে ত্যাগ করবার জন্য বার বার স্বামীকে অনুরোধ করেছিলেন। যুদ্ধগমনোদ্যত পুত্র আশীর্বাদ চাইতে এসেছিল, মুখের কথায় মৃত্যু পথগামীকে তিনি একবার আশীর্বাদ করতে পারেন নি, বলেছিলেন “যতো ধর্ম্মস্ততো জয়ঃ।” দেবতার কাছে ভক্ত অনেক কিছু চায়, কিন্তু তাঁর মতো নিষ্কাম প্রার্থনা ক’জন করতে পারে? ক’জন বলতে পারে, “আমার কর্মফল আমাকে ভোগ করতেই হবে (তা থেকে মুক্তি দেবার জন্য অন্যায় অনুরোধ তোমায় করব না) কিন্তু নিজের কর্মফলে যে কোনো যোনিতেই জন্মগ্রহণ করি না কেন, হে হৃষীকেশ, তোমার প্রতি ভক্তি যেন আমার অচল থাকে।” গান্ধারী বিদ্বেষ-ঝটিকা-বিক্ষুব্ধ মহাভারতের অন্ধকার আকাশে অত্যুজ্বল ধ্রুবতারকা, পাণ্ডব কৌরবের রণহুঙ্কার ছাড়িয়ে আজও তাঁর অকুণ্ঠ কণ্ঠধ্বনি আমাদের কানে এসে পৌঁছায়, আমাদের ধর্মের পথে সত্যের পথে সন্তানকে অবিচল রাখতে সাহস এবং শক্তি দেয়।

 এ যুগের আর একজন মনস্বিনী মহিলা পাণ্ডবজননী কুন্তী। পাণ্ডবেরা যে তাঁদের মাকে দেবীর মতো শ্রদ্ধা ভক্তি করতেন,