পাতা:সাহিত্যে নারী ⦂ স্রষ্ট্রী ও সৃষ্টি - অনুরূপা দেবী.pdf/৩৪৬

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
৩২৬
সাহিত্যে নারী ⦂ স্রষ্ট্রী ও সৃষ্টি - অনুরূপা দেবী

 সে যুগের বহু সুহৃদয় কবি ভারতনারীর দুঃখ-দুর্দ্দশায় পরিতাপ ও অশ্রুপাত ক’রে তাদের প্রতি বহু সহানুভূতি প্রকাশ করেছিলেন। আনন্দচন্দ্র মিত্রের এই গানটী সেদিনের শিশু বিবাহের বিধবাদের উদ্দেশ্যে রচিত হলেও আজও সমাজের কোন কোন স্তরে বিধবাদের অবস্থা এর চেয়ে খুব উন্নত হয় নি;—

‘ভারতশ্মশান মাঝে আমি রে বিধবাবালা,
বিষের মুরতি করে বিধি আমায় পাঠাইলা,
জানি না কেমন পতি, মনে নাইরে সে মূরতি,
তথাপি যুবতী হয়ে পেটে অন্ন নাই দু’বেলা।”

 ইংরাজী কাব্যগ্রন্থে বিচিত্রিতা নারীদের বহু চরিত্র দৃষ্ট হয়। তা’ এত বেশী যে একটীমাত্র প্রবন্ধে তা’ নিয়ে আলোচনা করতে যাওয়া হাস্যজনক। মিল্টনে নারীচিত্র তেমন কিছু নেই। বায়রণের “লিওনোরা” প্রভৃতিতে সুন্দর নারীচিত্র আছে। দেশদ্রোহী প্রেমপাত্রকে কঠোর ধিক্কারে লিওনোরার কঠোরতর প্রায়শ্চিত্তে বাধ্য করা নারীমহিমার একটী উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত,—তারপর সেই মৃত্যু-মিলন! বহু-বিলম্বিত হয়ে গেলেও সম্মিলিত হওয়াই যে তাদের ভাগ্যলিপি!

 টেনিসনের “ডোরা”য় নিষ্কাম প্রেম এবং আত্মত্যাগ, “রিচ্‌পা’’য় মৃত্যুমুখী জননীর ফাঁসিকাষ্ঠে ঝোলান রাজদণ্ডে দণ্ডিত পুত্রের খসে-পড়া অস্থিগুলি নিদ্রাহীন নিশীথ রাত্রে সংগ্রহ করার কাহিনী যেমন ভীষণ তেমনই সকরুণ। “লকশ্লেহেলে’’র বিশ্বাসঘাতিনী অ্যামির এবং ষাট বৎসর পরে পরলোকবাসিনীর স্মৃতি-তর্পণে স্নেহকোমল ক্ষমাময় প্রণয়ীর অন্তরভিব্যক্তি মানবচরিত্রের সুস্পষ্ট অভিব্যক্ত রূপ।