পাতা:সাহিত্যে নারী ⦂ স্রষ্ট্রী ও সৃষ্টি - অনুরূপা দেবী.pdf/৩৫

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
সাহিত্যে নারী : স্রষ্ট্রী ও সৃষ্টি
১৫

 বৈদিক এবং পৌরাণিক যুগের বিদুষী নারীদের মধ্যে অতি প্রাচীনকাল থেকেই দু’টি সম্পূর্ণ বিভিন্ন শ্রেণীর নারীকে দেখতে পাওয়া যায় তাদের একদলের কাছে আত্মাই সব, আত্মজ্ঞান এবং মোক্ষচিন্তাই পরম পুরুষার্থ, আর একদলের কাছে দেহ এবং তার সুখ বিধানই সমস্ত, তার জন্য জড়জগতের যত কিছু ঐশ্বর্য, সম্মান, রূপ, শক্তি প্রভৃতি প্রয়োজন তা সংগ্রহ করা চাই, দৈব কৃপালাভের দ্বারাই হোক আর পুরুষকারের দ্বারাই হোক। বেদ-রচয়িত্রী ব্রহ্মবাদিনীদের মধ্যে অধিকাংশ এবং পৌরাণিক যুগের ক্ষত্রিয় নারীদের মধ্যে অধিকাংশই দ্বিতীয় শ্রেণীর মধ্যে পড়েন। প্রথম শ্রেণীর মধ্যে মৈত্রেয়ী, গার্গী, সুলভা, মদালসা, শাণ্ডিল্য-কন্যা, শবরী প্রমুখ ব্রাহ্মণ, ক্ষত্রিয় এবং শূদ্র নারীদের পাই। এই দুই দলের মধ্যেও আবার দু’পক্ষেই আছেন অথচ কোনো পক্ষেই সম্পূর্ণ নেই গান্ধারী প্রমুখ এমন কয়েকজন অপূর্বচরিত্রা নারীকে দেখতে পাওয়া যায়। আবার ধর্মের প্রতিষ্ঠার জন্য অধর্মে ডুবেছেন, যে রাজসিংহাসনের মায়া ছিন্নবস্ত্রের মতো পরিত্যাগ করে পঞ্চপতির পদাঙ্ক অনুসরণ করে দু’দিন পরে মহাপ্রস্থানের পথের যাত্রী হয়েছেন, তারই জন্য ভারতবর্ষকে শ্মশান করে জ্ঞাতি-শোণিতে কুরুক্ষেত্রের সুবিশাল প্রান্তর প্লাবিত করেছেন, এমন নিষ্কাম হিংসার প্রতিমূর্তি দ্রৌপদীকে দ্বিতীয় দলের মধ্যে ফেললে অন্যায় হবে, অথচ না ফেললেও উপায় নেই।

 বৌদ্ধ যুগের নারী-লেখিকাদের সম্যক্ পরিচয় আমরা পাই না, আড়াই হাজার বছরের শত শত রাষ্ট্রবিপ্লব এবং বিদেশী আক্রমণে তাদের অনেকেরই নাম পর্যন্ত আজ লুপ্ত হ'য়ে গেছে।