পাতা:সাহিত্যে নারী ⦂ স্রষ্ট্রী ও সৃষ্টি - অনুরূপা দেবী.pdf/৩৬৮

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
৩৪৮
সাহিত্যে নারী ⦂ স্রষ্ট্রী ও সৃষ্টি - অনুরূপা দেবী

 রবীন্দ্রনাথের শতরূপা নারী প্রত্যেকেই নিজ নিজ স্বাতন্ত্র্য রক্ষা করে রঙ্গভূমে অবতীর্ণা হয়েছেন। ইদানীন্তন অনেক বড় লেখকের তিনখানি বই পড়লেই তার নারীচরিত্রগুলি আমাদের কাছে সিনেমা ষ্টারের মূর্ত্তি ধরে বসে। বহু পরিচিতাদের নূতন নূতন পরিবেশের মধ্যে—তা’ তিনি যত ভাল অভিনেত্রীই হোন সত্য করে ভাল লাগে না; বিশেষতঃ রূপসজ্জা দেখা না যাওয়ায় রেডিও-অভিনেত্রীর মতই তাঁদের সেই পূর্ব্বাপর পরিচিত বাণীরূপকে সহ্য করতে আমরা অনেক সময় বিশেষ করেই কষ্ট পাই। কিন্তু বিশাল রবীন্দ্র-সাহিত্য-সিন্ধুর অন্তর্বর্তিনীরা বিচিত্ররূপিণী, স্বপ্রকাশ, কারু সঙ্গে কারু রক্তসম্পর্কটী পর্যন্ত নেই!

 সপত্নীকন্যা “বিম্ববতী”র অনবদ্য রূপের ঈর্ষ্যায় ঈর্ষ্যান্বিতা রাজমহিষীর দুঃখের কাহিনী আমাদের মনকে বেশী বিচলিত করতে পারে না; ঈষৎ কৃপার সঙ্গে বলিয়ে নেয়;—“আহা বেচারা!” যেহেতু;—

“বিম্ববতী মহিষীর সতীনের মেয়ে
ধরাতলে রূপসী সে সকলের চেয়ে।”

 বৈমাতৃক ঈর্ষ্যার সনাতন চিত্র হলেও কবিত্বের যাদুস্পর্শে নূতন। অবশেষে নিজের তাপে বেচারী নিজেই জ্বলে পুড়ে ভস্ম হ’ল; “হেঁটে কাঁটা উপরে কাঁটা দিয়ে পুঁতে ফেলা’’র সনাতন দুর্ভোগটা রাজাকে আর ভুগতে হ’ল না।

 আর সেই ভাবতান্ত্রিক কবির যোগ্যপত্নী, সেই ছবিটি কি সুন্দর! যেখানে বোকা কবির ধনরত্ন ফেলে রাজকণ্ঠের মালা চেয়ে নিয়ে বাড়ী ফেরার আহাম্মুকিতে পাঠক-পাঠিকারা অস্বস্তি