পাতা:সাহিত্যে নারী ⦂ স্রষ্ট্রী ও সৃষ্টি - অনুরূপা দেবী.pdf/৩৬৯

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
সাহিত্যে নারী ⦂ স্রষ্ট্রী ও সৃষ্টি - অনুরূপা দেবী
৩৪৯

বোধ করতে থাকেন, পাঠকদের মধ্যে কেউ কেউ হয়ত বা ইতিমধ্যে সভীতচিত্তে পুরাতন সম্মার্জনীর আবির্ভাবের আতঙ্কে রুদ্ধশ্বাস হয়ে উঠেছেন, এমন সময় এ-কি ইন্দ্রজাল!

 “মালাখানি লয়ে আপন গলায় আদরে পরিলা সতী,

ভক্তি-আবেগে কবি ভাবে মনে,
চেয়ে সেই প্রেমপূর্ণ বদনে,—
বাঁধা প’ল এক মাল্য-বাঁধনে,
লক্ষ্মী সরস্বতী।”

 মহাকবি ব্যতীত এ-চরিত্র, রমণীবিশেষের এই নিগূঢ় মর্মকথা আর কে লিখতে পারত? অন্যত্র এই রহস্যময় মনের সম্বন্ধে তিনিই লিখেছেন;—

“বুঝা যায় আধ প্রেম আধখানা মন, সমস্ত কে বুঝেছে কখন?”

 এই মানবচিত্ত রহস্য বুঝতে পারা এবং সেই গুহ্যতত্ত্ব নিজে বুঝে পরকে বুঝানো এইখানেই ত জগতের মহাকবিদের বৈশিষ্ট্য।

 রবীন্দ্রনাথের শিশু-চিত্র তাঁর সর্ববিষয়ক রচনার মতই একটি বৃহৎ অংশ। “শিশু”, “শিশু ভোলানাথ” প্রভৃতিই নয়, রবীন্দ্রকাব্যের বহু অংশই এদের কথায় মধুময় হয়ে রয়েছে। “মোর চার বছরের মেয়েটী”র মত শিশুচিত্তের অর্ধচেতনার মধ্যে আধ-প্রচ্ছন্ন চিত্তবৃত্তির বিশ্লেষণ থেকে বৃদ্ধভৃত্যের মনস্তত্ত্ব তাঁর নখদর্পণে প্রতিবিম্বিত হয়েছে। গ্রামের কালো মেয়েকে “কৃষ্ণকলি” আখ্যা দিয়ে তার কালো হরিণ চোখ দুটির একটু তারিফ করা, “ফুলের মত কোমল তুমি অন্ধ বালিকা” বলে সোজা কথায় একটী কাণা মেয়ের উপর দরদ ঢেলে দিয়েও মরমী কবি মানসী নারীও প্রিয়াকে তাঁদের যথাপ্রাপ্য সম্মাননা দান