পরিজনবিযুক্তা মেয়েটির বুকের ব্যথা এমনি করেই পল্লীকবির ভাটিয়ালিতেও প্রকাশ পেয়েছে।
সতীনারীর পুণ্যকথায় রবীন্দ্র-সাহিত্য মহাপীঠের মতই পুণ্যভূমি। ধার্মিকা নারীর চিত্র মালিনীতে, ভিক্ষুণী-সুপ্রিয়ায়, আম্রপালিতে, অ-কল্যাণী নারীর চিত্র “কাশীর মহিষী করুণায়”; অসহায়া-মাতৃমূর্তি “দেবতার গ্রাসে’’র মোক্ষদায় জীবন্ত!—
“শুধু কি মুখের বাণী শুনেছ দেবতা?
শোননি কি জননীর অন্তরের কথা?”
কি আকুল অভিমানে ভরা মাতৃহৃদয়ের এ অভিব্যক্তি!
“বিসর্জনে’’র রাণী গুণবতীর শেষ মর্মকথা;—
“আজ দেবী নাই,—তুমি মোর একমাত্র রয়েছ দেবতা।”
“রাজা ও রাণী”র রাণী সুমিত্রার পরিপূর্ণ আত্মপ্রকাশ;—
“রাজন্, তোমারই আমি অন্তরে বাহিরে,
অন্তরে প্রেয়সী তব বাহিরে মহিষী।”
এবং
“পিতৃসত্য পালনের তরে রামচন্দ্র
গিয়াছেন বনে, পতিসত্য পালনের
লাগি আমি যাব।”
ইলার গভীর ও অন্তঃসলিলা প্রেমের ফল্গুধারায় বিক্রমদেবের নবজাগরণ সত্যই অপূর্ব! একনিষ্ঠ নারীপ্রেমের ইহাই অমোঘ মন্ত্র। এ’তে অন্ধেরও চোখ ফোটে। তার ভালবাসা গভীর অতলস্পর্শ, তাই সে প্রেম তরঙ্গ-ভঙ্গ-চপল নয়। সে গান গায়;—
“আমি নিশিদিন তোমায় ভালবাসি
তুমি অবসর মতো বাসিয়ো।”