পাতা:সাহিত্যে নারী ⦂ স্রষ্ট্রী ও সৃষ্টি - অনুরূপা দেবী.pdf/৩৭৬

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
৩৫৬
সাহিত্যে নারী ⦂ স্রষ্ট্রী ও সৃষ্টি - অনুরূপা দেবী

 তাঁর আর একখানি পুস্তক, পারিবারিক প্রবন্ধ” কল্পিত। নারী নয়, বাস্তব নারীদের উদ্দেশে বিরচিত এবং সর্বশ্রেণীর নারীর পথ প্রদর্শক। সঙ্কীর্ণচিত্তা মা যারা ছেলে পাছে বৌয়ের বশীভূত হয় সেই ভয়ে তার মনের দরজায় চাবি দিয়ে রাখতে চায়, বিবাহ-যাত্রাকালে ছেলেকে দিয়ে নিজের ‘‘ঘরের লক্ষ্মী”র বদলে “দাসী” আনবার প্রতিজ্ঞা করিয়ে নিয়ে তা’ পালন করবার জন্য পীড়ন করে, বউকে ঈর্ষ্যা করে ছড়া কাটে;—

‘‘চন্দ্রমুখী মেয়ে আমার শ্বশুরবাড়ী যায়।
খ্যাঁদানাকী বউ এসে বাটায় পান খায়।”

সেই সব মায়েদের ছবি এঁকে তাদের লজ্জা দিয়েছেন। যে-সব মেয়েরা ভাবে, “যে রাঁধে সে আর চুল বাঁধে না, তাদের “বিবি এবং বাঁদী’’ হয়ে “লক্ষ্মীচরিত্র’’ অধ্যয়ন করতে নির্দেশ দিয়েছেন, পুরাতন ছাঁচে নূতনরূপে নরনারীর সৃষ্টিকর্তারূপে তিনি বাস্তবের নারীকে সত্যকার পথ দেখিয়েছেন, তাদের বিভ্রান্ত করেন নি। গ্রন্থের উৎসর্গটী গদ্যে লেখা পরম কবিত্বে মণ্ডিত একটি খণ্ডকাব্য! অকাল কাল-কবলিতা প্রিয়তমা পত্নীর উদ্দেশে তাঁকে দশমহাবিদ্যার মত দশবিধ রূপে নিজ জীবনে অনুভব করে এই যে সশ্রদ্ধ প্রেমাঞ্জলি, এর মধ্যে অজবিলাপের বা বিরহী যক্ষের প্রেম-কাতরতা নেই। সতীদেহ স্কন্ধে নিয়ে ভ্রমণকারী উন্মত্ত ভোলানাথের মত বিক্ষিপ্ততা নেই, আছে অনাবিল প্রেমের সঙ্গে গভীর ভগবদ্‌বিশ্বাস, যার বলে মানুষ সর্বংসহ শক্তি সংগ্রহ করে পরলোককে প্রত্যক্ষ দর্শনে ধন্য হয়, চোখের আড়ালকে প্রাণের আড়াল ভেবে নিদারুণ দুঃখে আর্তনাদ করে না। একটুখানি নমুনা দিই;—