পাতা:সাহিত্যে নারী ⦂ স্রষ্ট্রী ও সৃষ্টি - অনুরূপা দেবী.pdf/৩৮

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
১৮
সাহিত্যে নারী : স্রষ্ট্রী ও সৃষ্টি

মারা গেলেন, দৈন্যে, অনাহারে নিরুপায় হ'য়ে দুই শিশুপুত্র নিয়ে পটাচারা দেশে ফিরছিলেন, পথের মধ্যে দুটি ছেলেরই মৃত্যু হ’ল। উন্মাদিনীর মতো দেশে ফিরে তিনি শুনলেন, ঘরচাপা পড়ে তাঁর পিতা, মাতা, ভাই—সবাই এক সঙ্গে মারা গেছেন। সে সময় ভগবান বুদ্ধ শ্রাবস্তীতে ছিলেন, হতভাগিনী শোকোন্মত্তা নারীকে তিনি ধর্মের মধ্যে আশ্রয় এবং সান্ত্বনা দিলেন, তাঁর উপদেশে পটাচারার জ্ঞানচক্ষু উন্মীলিত হ'ল। যে হোমাগ্নি সেদিন তাঁর অন্তরে জ্বলেছিল, সেই হোমশিখার আগুন তিনি সহস্র সহস্র নারীর হৃদয়ে জ্বেলে দিয়েছিলেন, রোগ, শোক, দৈন্য জয় করে নারীকে আত্মসচেতন হ'তে উদ্বুদ্ধ করেছিলেন। বৌদ্ধযুগের সর্বপ্রথম এবং সর্বপ্রধান ধর্মনেত্রী বুদ্ধবিমাতা গোতমীর কথা অন্যত্র বলেছি। তাঁর কাছে একদিক দিয়ে সমস্ত পৃথিবীর নারী ঋণী। তাঁর রচিত গাথায় তিনি বলেছেন: “হে সুগত, আমি তোমার মা, কিন্তু তুমি আমায় সদ্ধর্ম দান করে নূতন জন্ম দিয়ে আমার পিতৃস্থানীয় হয়েছ। আমি প্রতিপালন করে তোমায় বড়ো করেছিলেম, তুমি আমায় ধর্মদেহ দিয়েছ। তোমার মুহূর্তকালের তৃষ্ণা মেটাতে আমি দুধ খাইয়েছি, তুমি ধর্মদুগ্ধ পান করিয়ে আমাকে অক্ষয় শান্তি দিয়েছ। মান্ধাতা প্রমুখ রাজার নাম ভবসাগরে লোপ পেয়েছে, কিন্তু তোমার মা হয়ে আমি ভবসাগরে উদ্ধার পেয়েছি। রাজার মা, রাজার মহিষী হওয়া স্ত্রীলোকের পক্ষে সহজ, কিন্তু বুদ্ধমাতা এই নাম পরম দুর্লভ। মেয়েদের প্রব্রজ্যার অধিকার দেবার জন্য আমি তোমায় বার বার বলেছি, সেজন্য কোনো দোষ হয়ে থাকে তো ক্ষমা কোরো। তোমার