পাতা:সাহিত্যে নারী ⦂ স্রষ্ট্রী ও সৃষ্টি - অনুরূপা দেবী.pdf/৩৮৩

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
সাহিত্যে নারী ⦂ স্রষ্ট্রী ও সৃষ্টি
৩৬৩

 “দেবী চৌধুরাণীর দুটি প্রধান নারীচরিত্র প্রফুল্ল এবং সাগর; প্রফুল্ল দুঃখীর ঘরের মেয়ে, একমুঠো ভাতের জন্য শশুর বাড়ী এসেছিল, ধনীর আদুরে মেয়ে সাগর কদাচ কখন শ্বশুরবাড়ী আসে, শ্বশুর-শাশুড়ী তাকে পোষ মানাতে পারেন নি; কিন্তু সেই শিশুর মত সরল মেয়েটা সতীন প্রফুল্লকে স্বামীর স্নেহভাগিনী করবার জন্য চেষ্টার ত্রুটি করেন নি। সতীনকে স্বেচ্ছায় স্বামী দেওয়ার এই আদর্শ আজ সকলের ভাল লাগতে না পারে কিন্তু সাগরের ত্যাগকে শ্রদ্ধা না করে আজও কারও উপায় নেই। ভবানী পাঠকের সাহায্যে বিবিধ বিদ্যায় পারদর্শিতলাভ করে এবং ডাকাতি করে প্রভূত অর্থের অধিকারিণী হয়েও প্রফুল্ল মনে শান্তি পেল না, শেষ পর্যন্ত পতিসেবাই নারীর শ্রেষ্ঠধর্ম ভেবে সংসারে ফিরে এল, “হারীর মায়ের পারীর মায়ের হুকুম- বরদারীতেই বাহাল হবার আকাক্ষা নিয়ে। এ আদর্শ অত্যাধুনিকাদের হয়ত বিস্মিত করবে।

 “বিষবৃক্ষের মূল চরিত্র দুটিকে প্রতিহত করে জীবন্ত হয়ে আছে হীরা। তার ব্যর্থপ্রেমের অভিশাপ সে বিষবাষ্পের মত তার চারিপার্শ্বে বিকীরণ করে নিজে গ্লানিকর বিষাক্ত অভিশপ্ত জীবনের কঠোর প্রায়শ্চিত্ত গ্রহণ করেছিল। হীরা পদ্মপলাশ- লোচনা, কুটবুদ্ধিশালিনী অথচ অতৃপ্ত প্রেমাকান্দায় আত্মহারা হীরা আমাদের সহানুভূতি না কেড়ে নিয়ে পারে না। সংসার জ্ঞানে অনভিজ্ঞ, ধর্মবোধে বঞ্চিতা কত দুর্ভাগিনীর দুর্ভাগ্য জীবনেই ত এই ব্যাপার নিয়ত ঘটছে।

 সূর্যমুখী অত্যুচ্চ আদর্শবাদিনী, স্বামীপ্রেমের বন্যায় ডুবে থেকে সর্বসুখে সুখী ছিলেন, কিন্তু পতির আদর্শে আঘাত লাগায়