পাতা:সাহিত্যে নারী ⦂ স্রষ্ট্রী ও সৃষ্টি - অনুরূপা দেবী.pdf/৩৮৬

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
৩৬৬
সাহিত্যে নারী ⦂ স্রষ্ট্রী ও সৃষ্টি - অনুরূপা দেবী

 দীনবন্ধুর “নীলদর্পণে’’র প্রধান নারীচরিত্র সাবিত্রী, সৈরিন্ধ্রী, সরলতা। ইংরাজকুঠিয়ালের অত্যাচারে নবীনমাধবের পিতা কারাগারের মধ্যে আত্মহত্যা করলেন, তিনি নিজে লাঠিয়ালের হাতে মারা গেলেন, মা উন্মাদ হয়ে পুত্রবধূকে হত্যা করে নিজে প্রাণত্যাগ করলেন। গ্রন্থের উদ্দেশ্য ছিল নীলকরদের অত্যাচারের প্রতি দেশের শিক্ষিত জনসাধারণের দৃষ্টি আকর্ষণ করা; সে-উদ্দেশ্য প্রভূতরূপেই সফল হয়েছিল। দাসত্বপ্রথার বিরুদ্ধে লিখিত মার্কিন লেখিকা মিসেস হ্যারিয়েট রিচার ষ্টো’র “আঙ্কল টম্‌’স কেবিনে”র মতই “নীলদর্পণ”ও একটা বিরাট বর্ধিষ্ণু অন্যায়ের পথ রুদ্ধ করেছিল। অতিরিক্ত কান্নাকাটিতে এবং সর্বত্র সাধুভাষার ব্যবহারে নাটকটী ভারাক্রান্ত, স্ত্রীচরিত্রগুলির মধ্যে ভদ্রঘরের মেয়েরা অতিরিক্তরূপেই আড়ষ্ট, তবে তাদের ফাঁকে ফাঁকে দাসী, গ্রাম্যনারী, পদী ময়রাণী প্রভৃতি কয়েকটী নিম্নশ্রেণীর নারীচরিত্র তাদের অনাড়ম্বর কথাবার্তায় খুব সুন্দর ফুটেছে। “নবীন তপস্বিনী”তে জগদম্বা কুৎসিত কলহপরায়ণা নারীর একটি আদর্শ।

 দীনবন্ধুর সৃষ্ট সবচেয়ে বেশী জনপ্রিয় দুটি নারীচরিত্র “জামাই বারিকে”র পদ্মলোচনের দুই পত্নী বিন্দুবাসিনী এবং বগলামুখী ওরফে ‘বগি-বিন্দি’ একসময় বাংলাদেশে প্রবাদবাক্যে পরিণত হয়েছিল। সে-যুগের সপত্নীকলহের যে অপূর্বচিত্র দীনবন্ধু এঁকেছেন তার মধ্যে হাসির খোরাক যথেষ্ট আছে, অশ্রুর খোরাকও নেহাৎ অল্প নেই। ‘‘লীলাবতী’’ নাটকে নেশাখোর হলেও তৎকাল প্রচলিত সমাজ-ব্যবস্থায় মুখ্য কুলীনের সঙ্গে শিক্ষিতা মেয়ে লীলাবতীর বিবাহ-ব্যবস্থা দৈবগতিকে বন্ধ