পাতা:সাহিত্যে নারী ⦂ স্রষ্ট্রী ও সৃষ্টি - অনুরূপা দেবী.pdf/৩৯৫

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
সাহিত্যে নারী ⦂ স্রষ্ট্রী ও সৃষ্টি - অনুরূপা দেবী
৩৭৫

রাম কাণার পাতের কাছে, লোকে তবু দু’বার যাচে,
কথার দোসর সবার আছে, বঞ্চিত কেবল মনমোহন।’’

আবার তাঁহার বিয়োগের কয়েকদিন পরেই লেখেন;—

“কোথায় গেলে, আমায় একা ফেলে, সংসার তুফান ঘোরে?
বিলম্ব ক’রো না প্রিয়ে সাথে নিয়ে যেতে আমারে।”

 গিরীশ চন্দ্র ঘোষের নাম বাংলার নাট্যসাহিত্যে চির-অমরতা লাভ করে থাকবে তাতে কোন সংশয় নেই। যুগে যুগে মানুষের রুচি পরিবর্ত্তিত হয়, একদা তাঁর যে-সব নাট্যাভিনয়ে রঙ্গভূমি লোকাকীর্ণ থাকতো আজ তারা নির্বাসিত হলেও তাঁর লেখনী নিঃসৃত যে-সব দেবদেবী সম্বন্ধীয় এবং প্রেমের গান জনসাধারণের মধ্যে সুপ্রচারিত হয়ে রয়েছে তা’রা কোনদিন বিলুপ্ত হ’বার নয়। তাঁর কতকগুলি নাটক আজও মহাসমাদরে অভিনীত হয়, ছায়াচিত্রেও তাহা প্রতিফলিত হয়,—যেমন ‘প্রফুল্ল’, ‘বলিদান’, ‘জনা’, ‘বিল্বমঙ্গল’। প্রফুল্ল নাটকের প্রফুল্ল, বড় বউ প্রভৃতি চরিত্র জীবন্ত। “বলিদানে” সমাজসমাজের গভীর জ্ঞানের পরিচয় পাওয়া যায়। “পৌরাণিকচিত্র হলেও “জনা” কখন পুরাণ হবে না, আধুনিক চিত্রের রেখাপাত করে রেখেছে। “বিল্বমঙ্গলে’’র চিন্তামণি তুলসীদাস-পত্নীর মতই তাঁর জ্ঞানচক্ষু উন্মীলনের পাত্রী। সমাজে এইসব দৃষ্টান্তের প্রয়োজন নিত্যকাল ধরেই রয়েছে এবং থাকবে। শরৎচন্দ্রও তাঁর সতী-অসতীদের মধ্য দিয়ে এই কথাই বলতে চেয়েছিলেন। গিরিশ-সাহিত্যের আলোচনা যথেষ্টই হয়েছে; বিশেষতঃ কলিকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ে। এখানে স্থানাভাব; তথাপি তাঁর ‘‘ছত্রপতি শিবাজী”র জিজাবাই, “সিরাজউদ্দৌলা’’র লুৎফউন্নিসার উল্লেখ না করলে চলে না।