পাতা:সাহিত্যে নারী ⦂ স্রষ্ট্রী ও সৃষ্টি - অনুরূপা দেবী.pdf/৪০৫

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
সাহিত্যে নারী ⦂ স্রষ্ট্রী ও সৃষ্টি - অনুরূপা দেবী
৩৮৫

তরফা অত্যাচারের কাহিনী দেখে শুনে মনে হয় বুঝি এ-দেশের মেয়েরা কসাইখানার পশুপাল, নির্বিচারে খড়গাঘাত সইবার জন্য যুপকাষ্ঠের পাশে ভিড় ক’রে আছে, তাছাড়া তাদের আর কোন পরিচয়ই নেই। তারা শুধুই অত্যাচারিতা হয় এবং ভক্ত খৃষ্টানদের মত দ্বিতীয় গালটী বাড়িয়েই রেখেছে, ভুলেও কখন অপর কোন উল্টো নীতিই অনুসরণ করে নি! তবে প্রাচীন যুগের নারীদের সম্বন্ধে তাঁর বহু রচনা সেই মনস্বিনীদের মধ্য দিয়ে আমাদের বর্তমানের সমস্যা সমাধানের পথ দেখাবার সহায় হয়েছে, গৌরববোধকে জাগ্রত করবার সহায়তা করেছে। নারী যে নারী থেকেও জগতে একটা উচ্চতম স্থান লাভ করতে পারে, তার জন্য তাকে অতলে নামতে হয় না, ইহাই হ’ল চিরযুগের প্রধানতম শিক্ষা। এ আমরা তাঁর “কয়াধু”, “গিরিরাণী”-তেই শুধু নয়, ‘‘স্কন্ধ-ধাত্রী”, “সর্বদমন” প্রভৃতিতেও পেয়েছি। ‘মল্লিকুমারী” একমাত্র জৈন-নারী-তীর্থঙ্কর, তীর্থঙ্কর হয়েও তিনি নিজের নারীত্বের মহিমা অতিক্রান্ত হতে পারেন নি, মাতৃত্ব যে তাঁকে নিজ স্নেহপাশ দিয়ে বিশ্বের সন্তানদের সঙ্গে বিজড়িত করতে ছাড়েনি, ক্ষুদ্র “স্ব”কে বৃহৎ করে মাতৃত্বের সীমাকে মাত্র প্রসারিত করেছিল, তাঁর মুখের কথায় তা’ সুন্দর ভাবে প্রকাশ পেয়েছে;—

“মমতার পথে মোক্ষ আমার,
সাধনা আমার ত্রিকাল ভরি,
বিত্ত আমার চিত্ত-চারিত্র,
হৃদয়ে ললাটে রত্ন ধরি।
প্রসূতি না হ’য়ে শত সন্তান
পেয়েছি হৃদয়ে নিয়েছি টানি;