পাতা:সাহিত্যে নারী ⦂ স্রষ্ট্রী ও সৃষ্টি - অনুরূপা দেবী.pdf/৪০৬

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
৩৮৬
সাহিত্যে নারী ⦂ স্রষ্ট্রী ও সৃষ্টি - অনুরূপা দেবী

প্রসবের ব্যথা যে খুসী সে নিক
পালনের ব্যথা আমারি জানি।”

 “স্কন্ধ-ধাত্রী”তে যে চিত্র দেখি, তার স্থান, কাল ও পাত্র কিছুই যেন বদলায় নি, শুধু নামরূপমাত্রই পরিবর্তিত হয়েছে। একজন ‘মা’ যখন এতটাই আশা জানাচ্ছেন;—

“বজ্রকাটা আঙ্গুলে যার জ্যোৎস্না জড়িয়ে;
পাড়িয়েছি ঘুম ঘুম-পাড়ানি মন্ত্র পড়িয়ে,
সে মোর হবে দৈত্যজয়ী?—পুরবে মনের সাধ?…
অন্যায়েরি বন্যাজালে পারবে দিতে বাঁধ?...”

 পৌরাণিক রাজাধিরাজ ভরত বা সর্বদমনের ন্যায়বিচারকে আমরা সমর্থন করতে পারি নি, তাঁর ন্যায়ের মূলে নিশ্চয়ই প্রচণ্ড ভুল ছিল;—

“পীয়ুষ পিয়েছে যার কাছে, আজ বিষ পিবে সেই তাহারি কাছে;’’

 তার চেয়ে রাজার ‘‘দেহের দুষ্টব্রণ”কে রাজাই স্বহস্তে অস্ত্রাঘাত করতে পারতেন, নিরুপায়া জননীকে নিজের ন্যায়বিচারের মর্য্যাদার পায়ে এত বড় অন্যায় করতে বাধ্য করা কোন্ রাজধর্মের পক্ষ থেকে সুবিচার—তা’ তো জানি না!

 সত্যেন্দ্রনাথের লেখনী নারীর প্রতি অন্যায়ের প্রতিবাদে কোন সময়েই নিশ্চল থাকেনি। “দোরোখা একাদশী’’তে,—

“উড়িয়ে লুচি আড়াই দিস্তে দেড় কুড়ি আম সহ—
একাদশীর বিধানদাতা করেন একাদশী,
এদিকে ওই ক্ষীণ মেয়েটি নিত্য একাহারী—
একাদশীর বিধান পালন করছে প্রাণে ম’রি,
কণ্ঠাতে প্রাণ ধুঁকছে, চোখে সর্ষে-ফুলের সারি।”