পাতা:সাহিত্যে নারী ⦂ স্রষ্ট্রী ও সৃষ্টি - অনুরূপা দেবী.pdf/৪১০

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
৩৯০
সাহিত্যে নারী ⦂ স্রষ্ট্রী ও সৃষ্টি - অনুরূপা দেবী
৩৯০

তারা শক্তি দেয় বুকে, তারা হাতে দেয় ধনুঃশর,
তাই নর ত্রিভুবনজয়ী।
হাসিমুখে অকাতরে সৃষ্টিসিন্ধুমন্থনের বিষ,
সঙ্গোপনে তারা করে পান।
মানুষের ঘরে ঘরে তাই ভরে আজো অহর্নিশ,
আনন্দের অমৃত অম্লান।”

 জসিমুদ্দিনের কবিতার মধ্য দিয়ে বাংলার গ্রাম্য নারীর সুখদুঃখের অভাব-অভিযোগের, আনন্দের স্মিতহাস্য ও অশ্রুসজল নেত্রের যে ছবির পর ছবি আমাদের মনের মধ্যে ফুটে ওঠে, তা’ আমাদের বাস্তব জীবনের মতই সমানভাবে হাসায় কাঁদায়। নারীর চিত্তগহনে ঢুকে অতি সহজ সুন্দর ভঙ্গীতে তিনি তাদের যে-সব মনের কথা প্রকাশ করে দিয়েছেন, তা’ দেখেও তারাও অতিমাত্রায় বিস্মিত হবে। তার একটি চিত্র এই;—

“এ-গাঁও হতে ভাটীর সুরে কাঁদে যখন গান
ও-গাঁর মেয়ে বেড়ার ফাঁকে রয় সে পেতে কান।”

খুনদায়ে পলাতক পতির হতভাগিনী পত্নীর এই করুণ চিত্রখানি;—

“ঘরের ভিতরে সপটি ফেলায়ে বিছায়ে নকসী কাঁথা,
সিলাই করিতে বসিল যে সাজু একটু নোয়ায়ে মাথা।
পাতায় পাতায় খস খস করে শুনে কান খাড়া করে
যারে চায় সে-তো আসেনাকো শুধু ভুল করে করে মরে।
তবু যদি পাতা খানিক না নড়ে ভাল লাগে না তার।
আলো হাতে করে দূর পানে চায় দ্বার খুলে বার বার।”

পতিবিরহিণী বঙ্গবধূটি দুঃখের দহনে দগ্ধ হয়ে হয়ে অবশেষে যখন ঝরে পড়বার অবস্থায় পৌঁছেচে, তখন শ্রীরাধিকার মতই—সে,