পাতা:সাহিত্যে নারী ⦂ স্রষ্ট্রী ও সৃষ্টি - অনুরূপা দেবী.pdf/৪১২

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
৩৯২
সাহিত্যে নারী ⦂ স্রষ্ট্রী ও সৃষ্টি - অনুরূপা দেবী

নারীমহিমা দীপ্ত। নারী যে পুরুষের মহত্ত্বের দ্বারেরই উপাসিকা এই তথ্যটি এই দেওয়ানা নবাবজাদীর অতিকরুণ ক্লান্ত জীবনকথার মধ্য দিয়ে উজ্জ্বলরূপে প্রকটিত হয়ে উঠেছে।

 আমাদের ঘরে ঘরে প্রতিবেশীর গৃহাঙ্গনে, গ্রামের মধ্যে, সহরের পথের ধারে ধারে কতই অকথিত, অমীমাংসিত রহস্য ও মিলন-বিরহাত্মক সুখদুঃখের ইতিহাস প্রাত্যহিক জীবনে সংগঠিত ও সংঘটিত হয়ে উঠছে,—এই সবের মধ্য থেকে সূক্ষ্ম দৃষ্টিসম্পন্ন কবি এবং কথাকার অতি সহজে ঘটনা সংস্থান করে নিয়ে কেমন করে মানবচিত্তকে চমৎকৃত করে দিতে পারেন বলতে গেলে রবীন্দ্র নাথই তার প্রথম পথপ্রদর্শক। গণসাহিত্য আজ যাকে বলা হয়, ফরাসী এবং রুষ সাহিত্যিকরা যে-পথ জনসাধারণের জীবনদ্বন্দ্বের মধ্য থেকে খুঁজে নিয়েছিলেন, সে-পথের যাত্রারম্ভ বাংলাসাহিত্যে আধুনিক যুগে রবীন্দ্রনাথের ছোট গল্প দিয়েই সুরু হয়েছিল। অবশ্য প্রাচীন বাংলায় আমরা বহুপূর্বেই এই গণ-সাহিত্যের সঙ্গে সাক্ষাৎ পরিচয়ে ভালভাবেই এসেছি। রাজা মহারাজদের আশেপাশে শুধু পাত্রমিত্র সেনাপতি বয়স্য বণিক নয়, সেখানে অতি সামান্য নগণ্যদেরও, যেমন দাসদাসী, অস্পৃশ্যজাতীয় পরিবারবর্গের সুখদুঃখের কথাচিত্রের কোনই অভাব ছিল না। ইদানীং সে-চিত্রের উপর কালের ধূলিজাল পড়েছিল এবং নূতন রংয়ে যে আলেখ্য লেখা হচ্ছিল তা’ প্রায় ধনী পরিবার অথবা রাজপুতানার রাজা রাজকুমার বা রাজকন্যাদের নিয়েই হচ্ছিল। আর এইজন্যই তাদের নিজেদের দেশের থেকেও বাংলাদেশেই টডের “রাজস্থান” গ্রন্থের প্রচার খুব বেশী হয়েছিল।