পাতা:সাহিত্যে নারী ⦂ স্রষ্ট্রী ও সৃষ্টি - অনুরূপা দেবী.pdf/৪১৫

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
সাহিত্যে নারী ⦂ স্রষ্ট্রী ও সৃষ্টি - অনুরূপা দেবী
৩৯৫

কোন উপায়ই দান করে যেতে পারেনি। সত্যে ও কল্পনায় অথবা সত্যেরই প্রতিলিপিতে এইখানেই প্রভেদ।

 “ছাগলের খুরের মত খুটখুটে” জুতাপরা “এনামেল-করা-মূখী” কেটিকে আজকাল হাটে বাটে সর্বদাই দেখতে পাচ্ছি, তবে সে ঐ দুটি ঐশ্বর্যের প্রসাদে অমর হয়ে রইল! ছেলেমেয়েদের বিয়ের বয়েসে বিয়ে না দিলে যে কি রকম্‌ বিয়ে-পাগলা হয়ে ওঠে “চিরকুমার সভা”র কুমার-কুমারীগুলি তারই প্রকৃষ্টতর উদাহরণ।

 বীরবল বা প্রমথ চৌধুরীর রচনা শিক্ষিত লোকেদের জন্য, ঠিক জনসাধারণের জন্য নয়। তাঁর গল্পরচনার ঢংও নূতনতর। “চার ইয়ারি কথা”র গল্পচতুষ্টয়ের নায়িকারা চারিজনেই বিদেশিনী। বিদেশিনী চরিত্রচিত্র আমরা বিদেশী সমাজেই দেখতে অভ্যস্ত, স্বদেশীয় নরের সংস্রবে বিদেশিনীকে আমরা একটু সন্দেহের চক্ষেই দেখে থাকি, রস গ্রহণে বাধা পড়ে। প্রভাতকুমার মুখোপাধ্যায়ের অনেক ভাল গল্পেও আমরা এই অবস্থায় পড়েছি। অবশ্য তাই বলে বীরবলের সরস রচনায় “দিদিমার গল্প” বা “বীণাবাই” প্রভৃতির কথাও বাদ পড়েনি।

 প্রভাতকুমারের নারীচরিত্র অনেক এবং বহু বিচিত্রতাপূর্ণ। ছোট গল্পের মধ্য দিয়ে অপূর্ব রসসৃষ্টিই তাঁর বঙ্গসাহিত্যে অমূল্য দান। ‘দেবী’ গল্পের কথা কোনদিন ভুলতে পারা যাবে না। ঘটনাচক্রে পড়ে স্বয়ং ভগবানকে যখন ভূত হ’তে হয়, তখন বেচারী একটি পল্লী-বধূর অদৃষ্টে শ্বশুরের স্বপ্ন-দর্শনের ফলে দেবীত্ব-প্রাপ্তি এ আর বিচিত্র কথা কি? এমন ব্যাপার নাকি আজও ঘটছে। তাঁর উপন্যাস বর্ণিত বহু নারী-চরিত্র নিয়ে আলোচনা এখানে সম্ভব নয়, তবে শুধু একটিরই কথা বলবো।