পাতা:সাহিত্যে নারী ⦂ স্রষ্ট্রী ও সৃষ্টি - অনুরূপা দেবী.pdf/৪১৭

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
সাহিত্যে নারী ⦂ স্রষ্ট্রী ও সৃষ্টি - অনুরূপা দেবী
৩৯৭

 শরৎচন্দ্র আদর্শবাদী, নিম্নশ্রেণীর জীবনযাত্রা এবং সমাজবহির্ভূতাদের কেবলমাত্র কুৎসিত দিকটাই নয়, তার ভাল দিকটাও দেখেছেন এবং এঁকেছেন। প্রত্যক্ষ এবং বাস্তব অনুভূতিই তাঁর লেখাকে সজীব এবং সবল করেছে। রবীন্দ্রনাথের মত তিনি রসের উর্দ্ধলোকে বিচরণ করতে পারেন নি; বিশ্বজগতের অনাদি অনন্তযুগের বড় বড় কথা কোথাও ভাবেন নি, সীমাকে অসীমে মেলাবার সাধনা বা সাধ্যও তাঁর ছিল না। নিজের সঙ্কীর্ণ সীমার মধ্যে নগরের এবং পল্লীসমাজের ভীরু স্বার্থান্ধ পৌরুষহীন পুরুষের পাপের এবং অত্যাচারের বোঝ বহন করে যেখানে নারী নিঃশব্দে অন্ধকারে প্রতিদিন লুটিয়ে পড়েছে, সেখানে শরৎচন্দ্রের অকৃত্রিম সহানুভূতি আলোকসম্পাত করে সমাজকে তার সম্বন্ধে সচেতন করে তুলে তাকে সাবধান করতে চেয়েছে। তাঁর লেখার ‘মটো’ (motto) হ’ল—

“যেখানে দেখিবে ছাই, উড়াইয়া দেখ তাই
মিলিলে মিলিতে পারে লুকানো রতন।”

 “পথনির্দেশ”-এর নায়িকা হেমের চরিত্রের বিশেষত্ব পরবর্তী ললিতা, ভারতী এমন কি কমলের মধ্যেও (ঘরকন্না করবার সময়) অল্পবিস্তর দেখতে পাই; এদেরই সর্বপ্রথম সংস্করণ ‘হেম’। এই বইয়ের কতকগুলি মন্তব্য সামাজিক অল্পশিক্ষিতা নারীর পক্ষে নিতান্ত ক্ষতিকর হয়েছিল বলে জানি।

 “চরিত্রহীন”-এর কিরণময়ীতে “নৌকাডুবি”র বিনোদিনীর ছাপ সুস্পষ্ট। “রোহিণী”র প্রেতাত্মা কিরণময়ীর পরেও বহুকাল ধরে বঙ্গসাহিত্যের ভাঙ্গা-মন্দিরের অন্তবর্তী পচা ডোবা এবং বাঁশঝাড়ের আনাচে কানাচে ঘুরে বেড়িয়েছিল; এখন যেন একটু