পাতা:সাহিত্যে নারী ⦂ স্রষ্ট্রী ও সৃষ্টি - অনুরূপা দেবী.pdf/৪২

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
২২
সাহিত্যে নারী : স্রষ্ট্রী ও সৃষ্টি

নারীদের মধ্যে অধিকাংশই ধর্মসাধনার চেয়ে কবিতা রচনার দিকে বেশী ঝোঁক দিয়েছিলেন। মহাপুরুষ বুদ্ধের সময়ে কিছু দিনের জন্য এই কাব্যস্রোতের মোড় ফিরে যায় ধর্মসাধনার দিকে নির্বাণের কামনায়। বুদ্ধদেব বলেছেন কোনো কোনো নারী পুরুষের চেয়ে ধর্মপ্রাণতায় এবং মানসিক শক্তিতে বড়। তিনি প্রথম যৌবনে তাঁর পাত্রীনির্বাচনের সময় ‘মেয়ের কবিতা লিখতে জানা চাই’[১] এই দাবী জানিয়েছিলেন। পরবর্তী জীবনে মুক্তিসাধনার বিঘ্ন মনে করে তিনি নারীকে সন্দেহের চক্ষে দেখতেন, তবু আনন্দের এবং মহাপ্রজাবতী গোতমীর অনুরোধে তাঁকে মেয়েদের সন্ন্যাসিনী হ’বার অনুমতি দিতে হয়। ভগবান তথাগত যেদিন মহাপ্রজাবতী গোতমীকে ধর্মদীক্ষা দিলেন সেদিন ভারতীয় নারীর ইতিহাসের এক স্মরণীয় দিন। ইতিমধ্যে দেশের বিলাস-ব্যসন বৃদ্ধি হয়েছিল। জাতীয় জীবনে মননধর্মী আর্য সভ্যতার উপর প্রাণধর্মী অনার্য সভ্যতার যে প্রভাব মহাভারতের যুগেই দেখা দিয়েছিল তা ক্রমেই প্রবলতর হচ্ছিল। আত্মার উৎকর্ষসাধনের চেষ্টার চেয়ে পুরুষের অনুকরণে হাবভাব সাজসজ্জা এবং কলাচর্চায় তাদের অধিকাংশ সময় ব্যয়িত হ'ত, ফলে নারীপ্রতিভার বিপুল অপচয় ঘটছিল। হঠাৎ নবধর্মের নূতন উৎসাহবাণী তাদের আত্মসচেতন করে তু'ললে, নির্বাণলাভের আশায় সহস্র সহস্র নারী সহসা সেদিন সংসারের সব সুখে জলাঞ্জলি দিয়ে পথে এসে দাঁড়াল। তাদের মধ্যে সকলশ্রেণীর সকল অবস্থার নারীই ছিল, রাজরাণী থেকে ভিখারিণী,


  1. সা-গাথ লেখ-ণিখিত গুণ অর্থযুক্তা যা ফলা ইদৃশ ভবেস্মম তাং বরেখাঃ।