পাতা:সাহিত্যে নারী ⦂ স্রষ্ট্রী ও সৃষ্টি - অনুরূপা দেবী.pdf/৪২৩

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
সাহিত্যে নারী ⦂ স্রষ্ট্রী ও সৃষ্টি - অনুরূপা দেবী
৪০৩

এই বিংশ শতাব্দীর রুচির সঙ্গে খাপ খায়নি। শেষোক্ত লেখকের “মেঘনাদ”-এর “মনোরমা” এ বিষয়ে চূড়ান্ত দৃষ্টান্ত। ‘‘শুভা’’ও বড় কম যায় না। আদর্শ চরিত্র মেঘনাদকে মনোরমা কি ক’রে ক্রমে আদর্শভ্রষ্ট করল তার চিত্র এঁকে লেখক মানুষের অপরাধ-প্রবণতার জয়গান গেয়েছেন এবং ফৌজদারী আদালতের নোংরামি ভদ্র-সাহিত্যে টেনে এনেছেন অথচ তা’ থেকে কোন আশার কথা শোনাতে পারেন নি। ‘শুভা’, ‘শাস্তি’, ‘রক্তের ঋণ’ প্রভৃতি প্রথম দিকের রচনায় আমরা তাঁর কাছ থেকে যেমন আঘাত পেয়েছি, তাঁর পরবর্তী রচনার মধ্য দিয়ে সেই মর্মাঘাত আমাদের মন থেকে সম্পূর্ণ দূরীভূত হয়ে গভীর কৃতজ্ঞতার সঞ্চারও করেছে। “রাজগী”র সাবিত্রী চরিত্রে আমরা প্রথম চকিত বিস্ময়ে তাঁর আধুনিক যুগের নব সাবিত্রীকে দর্শন করি। তারপর কত সতী, কত সাবিত্রী, কত মদালসা, কত উভয় ভারতীর সঙ্গে পরিচয়ে আসবার সুযোগে আসা গেল! “সতী” উপন্যাসের সুরমা, “তৃপ্তি”র মিনতি, “অভয়ের বিয়ে” এবং “তারপর”-এর সরমা, “রবীন মাষ্টার” “বংশধর”, “শেষ পথ”, “পাগল”-এর নারায়ণী, “মিলন-পূর্ণিমা” প্রভৃতি বহু বিভিন্ন উপন্যাসে প্রত্যেকটী বিভিন্ন নারী চরিত্র সৃষ্টি করে লেখক তাঁর সৃষ্টিতত্ত্বজ্ঞানের পরিচয় প্রদান করেছেন।

 চারুচন্দ্র বন্দ্যোপাধ্যায়ের ‘‘স্রোতের ফুল”, “হেরফের”, “দোটানা”, “মুক্তিস্নান”, “চোরকাঁটা”, “পঙ্কতিলক”, “ধোঁকার টাটি”, “হাইফেন” প্রভৃতি বহু উপন্যাসে বিভিন্ন চরিত্রের নারীদের সাক্ষাৎ পেয়েছি। সমাজের বিভিন্ন স্তরের অন্তঃপুরের চিত্র ভালই ফুটেছে, উন্নত চরিত্র সৃষ্টির একান্ত অভাব।