পাতা:সাহিত্যে নারী ⦂ স্রষ্ট্রী ও সৃষ্টি - অনুরূপা দেবী.pdf/৪২৫

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
সাহিত্যে নারী ⦂ স্রষ্ট্রী ও সৃষ্টি - অনুরূপা দেবী
৪০৫

সেবার জন্য তাদের প্রায় সমস্ত দরজাই চৌচাপটে খোলা। এ কাহিনীর প্লট অন্ততঃ ষাট সত্তর বৎসর পূর্বেকার হ’লে অসহায়া অবলার নিরুপায়ত্ব বরং বিশ্বাসযোগ্য হ’ত, আর তা’ হ’লেও সেদিনেও নৌকাডুবির কমলা, “ইন্দিরা”র ইন্দিরা অনেকেই আত্মরক্ষার সাধারণ উপায় অবলম্বন করে অসাধারণ ফল লাভ করেছিলেন। “চোরের উপর রাগ করে ভুঁয়ে ভাত খাওয়া’’র দৃষ্টান্তই সন্ধ্যার অধঃপতনের মূল কারণ।

 পরশুরামের (রাজশেখর বসু) “গড্ডলিকা’’, ‘কজ্জলী”, ‘হনুমানের স্বপ্ন’’ বিচিত্র রস-সরস। পৌরাণিকা ও আধুনিকা নারীকে তিনি অতি পরিচিতাদের মধ্য থেকেই নির্বাচন করেছেন, অথচ অতি পরিচয়ের ভারাক্রান্ত করেন নি। ওরা ঈষৎ আড়াল দিয়েই চলে গেছে, আমরা তাদের সাড়ীর আঁচলা, চাবীর শব্দ, চুড়ির রিনিঝিনি থেকেই তাদের অস্তিত্ব বুঝতে পেরেছি; মায় “কচি সংসদ”-গল্পের গৃহিণীর সদ্য-কেনা হীরের ব্রোচের ঝিলিকটাও আমাদের চোখের মণিতে ঠিকরে পড়েছে। বুঁচকীর ঘাড় বেঁকিয়ে “য্যাঃ” বলা,—যার মানে “হ্যাঁ”,—সে ব্যাখ্যা আমরাও মেনে নিয়েছি। “দেড়হাতি বাঁদীপোতার গামছা”পরা, “পাকা লঙ্কার মত ওষ্ঠাধরা”, “ভুট্টার কচিদানার মত দন্তবিশিষ্টা”, “জ্বলন্ত একটি হাউইয়ের কাঠি”র সহিত উপমেয়া “জোয়ান জিলটার”কে বিচিত্র সাড়ীপরা অবস্থায় আমরা আজকাল প্রায়ই পথে ও ঘরে দেখতে পাই; তাই ঐ বিদেশিনী মেয়েটীকে খেতে শুতে উঠতে বসতে মনে না পড়ে উপায় নেই।

 কলকাতা সহরের রাজপথ-বিচারিণী আমাদেরই ঘরের কন্যা বধূদের নিরাবরণ মাথার চুলের সিঁথিতে সিঁদুর রেখা খুঁজে না