পাতা:সাহিত্যে নারী ⦂ স্রষ্ট্রী ও সৃষ্টি - অনুরূপা দেবী.pdf/৪৩

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
সাহিত্যে নারী : স্রষ্ট্রী ও সৃষ্টি
২৩

পতিতা এবং গণিকারা পর্যন্ত সেদিনের সেই ভিক্ষুণীসঙ্ঘে স্থান পেয়েছিল। এদের মধ্যে যাঁরা শিক্ষিতা ছিলেন তারা পূর্বসংস্কৃতি ত্যাগ করেননি, তাঁদের পাণ্ডিত্য ধর্মের সেবায় লোকশিক্ষার কাজে লাগিয়েছেন, যাঁরা কবি ছিলেন তাঁরা ধর্ম বিষয়ক কবিতা রচনা করে মানুষের অন্তর জয় করেছেন। নারীর রচিত কবিতা শুধু শিক্ষিতের সৌখীনের সখের সামগ্রী হয়ে রাজসভায় এবং নাগরিকের প্রমোদভবনে ব'সে না থেকে যেনি বিশ্বের প্রশস্ত রাজপথে ধর্মের জয়ভেরী বাজিয়ে যাত্রা ক'রল, ‘সেদিন এক হ'য়ে গেল মান-অপমান, ব্রাহ্মণ আর জাঠ', সেদিন ভারতের এক পরম গৌরবের দিন। এর অনতিকাল পূর্বে এবং পরবর্তী বৌদ্ধ ও হিন্দুযুগে পার্থিব প্রেম এবং প্রকৃতি-বর্ণনাই ছিল অধিকাংশ নারীলিখিত কবিতার বিষয়-বস্তু, ভগবান বুদ্ধের পুণ্যপ্রভাবে প্রাথমিক বৌদ্ধ যুগের নারীকবিরা নিজেদের সমস্ত ক্ষুদ্রতার বন্ধন ছিঁড়ে ফেলে পরিপূর্ণ মনুষ্যত্বের মহিমায় প্রকাশিত হ'লেন, কাব্যক্ষেত্রে ধর্মের জয়গান গেয়ে দুঃখতপ্ত পৃথিবীকে অভয়ের এবং সান্ত্বনার বাণী শোনালেন। মৈত্রেয়ীর বাণী নূতন মূর্তি নিয়ে ফিরে এল।

 থেরী অনুপমা ছিলেন সাকেত নগরের এক বিখ্যাত ধনীর মেয়ে, তিনি লিখেছেন, “আমার সৌন্দর্যখ্যাতি শুনে আমাকে বিবাহ করবার জন্য বহু রাজপুত্র, বহু শ্রেষ্ঠিপুত্র প্রার্থী হয়েছিলেন, তাঁদের দূতেরা এসে পিতাকে বলতেন ‘অনুপমাকে ওজন ক’রলে যত সোনা হয়, তার আটগুণ সোনা দে'ব, আমাদের পাত্রকে কন্যাদান করুন’ কিন্তু লোকশ্রেষ্ঠ বুদ্ধকে দেখবার জন্য আমার প্রাণ উদ্বুদ্ধ হ’ল, তাঁর চরণবন্দনা ক'রে আমি ধ্যানে বসলুম। তিনি আমায় ধর্ম দীক্ষা দিলেন।”