পাতা:সাহিত্যে নারী ⦂ স্রষ্ট্রী ও সৃষ্টি - অনুরূপা দেবী.pdf/৪৪

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
২৪
সাহিত্যে নারী : স্রষ্ট্রী ও সৃষ্টি

 শুভানাম্নী এক থেরী আমবাগানে সাধনারত ছিলেন, এমন সময় জীবক নামক এক ধূর্ত্ত তাকে কুপথে নিয়ে যাবার জন্য চাটুবাদ আরম্ভ করে। জীবক বলে, “তোমার চোখ দুটি পাহাড়ী কিন্নরীর মতো অথবা হরিণীর মতো। ঐ চোখ দেখলে কি মানুষের প্রেমের তৃষ্ণা বেড়ে যায় না?” শুভা নিজের হাতে নিজের চোখ দুটি উপড়ে ফেলে ধূর্তকে দিয়ে বললেন, “হে পুরুষ, যে চোখ দুটির তুমি এত সমাদর করছ, এই নাও, সে চোখ দুটি তোমাকেই দিলুম।” ধূর্তের পাপলালসা নিমেষ মধ্যে ঘুচে গেল, সে পায়ে পড়ে সেই মহাভাগা তপস্বিনীর কাছে ক্ষমা চাইল এবং জীবনে আর কখনো পরনারীর দিকে পাপদৃষ্টিতে চাইবে না বলে প্রতিজ্ঞাবদ্ধ হ’ল। বুদ্ধের কৃপায় শুভা দিব্যচক্ষু পেয়েছিলেন। ত্রিশটি গাথায় তিনি তাঁর জীবনের এই স্মরণীয় ঘটনাটি বর্ণনা করে গেছেন। কৃশা গোতমী লিখেছেন, “আমার দুই পুত্র মারা গেল, স্বামী অনশনে মারা গেলেন, মা বাবা ভাই একসঙ্গে একদিনে আগুনে পুড়ে মরলেন। আত্মজ্ঞানহারা হয়ে দারিদ্র্যের কষ্ট সইলুম, শ্মশানে পুত্রের মাংস গৃধিনীদের খেতে দেখলুম। এই রূপে পতিহারা কুলহারা হ'য়ে ভগবান বুদ্ধের দয়ায় অমৃতত্ব লাভ করেছি।”

 সংসারে অনেক জ্বালাযন্ত্রণা পেয়ে যাঁরা বুদ্ধের ধর্মে সান্ত্বনা লাভ করেছিলেন তার মধ্যে থেরী ঋষিদাসী তিন বার পতিপরিত্যক্তা হয়েছিলেন, ভদ্রা আত্মরক্ষার জন্য স্বামী হত্যা ক'রে অনুতাপে দগ্ধ হয়েছিলেন, উষিবরী স্বামীশোকে এবং বৈশিষ্টী পুত্রশোকে সংসার ত্যাগ করেছিলেন। অম্বপালী, বিমলা, অর্ধকাশী প্রমুখ সুন্দরী গণিকারা তাঁদের পাপজীবনে জলাঞ্জলি