পাতা:সাহিত্যে নারী ⦂ স্রষ্ট্রী ও সৃষ্টি - অনুরূপা দেবী.pdf/৪৪০

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
৪২০
সাহিত্যে নারী ⦂ স্রষ্ট্রী ও সৃষ্টি - অনুরূপা দেবী

 একজন সাহিত্য সমালোচকের বিচারে ‘‘ব্রজরাণী” “মা” উপন্যাসে দ্বিতীয় চরিত্র হলেও তা’র প্রধানতম রূপচিত্র! বর্তমান যুগেও দুর্ভাগ্যক্রমে সে “সতীনে পড়া মেয়ে”। ব্রজরাণী কোথায়ও দেবী নয়। তার সমস্ত মেয়েলি দোষের সঙ্গে ব্যর্থমাতৃত্বের অতৃপ্ত তীব্র আকাঙ্ক্ষায় কেমন করে সে সপত্নীপুত্রের প্রতি ক্রমশঃ বাৎসল্যরসে ভিজে ত্যাগের মন্ত্রে দীক্ষিতা হ’ল, সেইটিই বিশেষ করে এই গ্রন্থে প্রদর্শিত হয়েছে। এই চিত্রে বাস্তবতার সঙ্গে কল্পনার হয়ত যৎসামান্য ভেজাল থাকতে পারে, কিন্তু যদি থাকে,—তা’ অতীব মৃদু মাত্রায়! মা হ’বার আগ্রহ বা মাতৃত্বের ক্ষুধা নারীকে কত উচ্চে নিয়ে যেতে পারে, ব্রজরাণী চরিত্রে তা’ সুপ্রকট। বহুনারীর মধ্যে সপত্নী পুত্রের প্রতি নিজ গর্ভজাত পুত্রবৎ স্নেহ আমরা লক্ষ্য করেছি, আবার সপত্নী সন্তানবিদ্বেষও বড় কম দেখিনি। ‘মনোরমা’ বাস্তবিকই ভারতের চিরন্তন আদর্শ নারী সীতা সাবিত্রীরই সম জাতীয়া, এ যুগের পক্ষে হয়ত একটুখানি বেশী ভাল! ব্রজরাণী ছাড়া স্পষ্টভাষিনী “শরৎশশী”কে সবাই পছন্দ করে, ব্রজরাণীও তাকে হারিয়ে তার গুণ পরে বুঝেছিল। যুগের হাওয়া অতিক্রম করেও যে আদর্শ বেঁচে থাকে, এ তারই প্রমাণ।

 “মন্ত্রশক্তির বিদ্রোহিনী “বাণী” একই সঙ্গে পাঠকের ক্রোধ উদ্রেক এবং সহানুভূতি আকর্ষণ করে; ভ্রান্ত আদর্শ ও তীব্র আভিজাত্যবোধ তাকে তার নারীধর্ম থেকে বিচ্যুত করেছিল, কিন্তু সে ভিতর থেকে খাঁটি জিনিস ছিল বলেই নিজধর্মে সুপ্রতিষ্ঠিতা হ’তে তার আটকায়নি। অবশ্য বড় দুঃখের প্রচণ্ড আঘাত সহ্য করবার পর এই মন্ত্রশক্তির পূর্ণ প্রভাব প্রকট হয়েছিল।