পাতা:সাহিত্যে নারী ⦂ স্রষ্ট্রী ও সৃষ্টি - অনুরূপা দেবী.pdf/৭০

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
৫০
সাহিত্যে নারী ⦂ স্রষ্ট্রী ও সৃষ্টি

অন্যকে এবং সমগ্র পুরুষ জাতিকে কখনও সে ভাবে আক্রমণ করেন নি। এই একদেশদর্শিতার অভাব তাঁদের স্বভাবগত সংযম এবং সংস্কারগত ধৈর্য ও সত্যনিষ্ঠার পরিচয়। কোনো মোহে এবং কোনো উত্তেজনায় তাঁরা নিজেদের এই চরিত্রগত মাহাত্ম্য এবং চিরাচরিত প্রথা যেন ত্যাগ না করেন।

 উপনিষদের ও বৌদ্ধযুগের জ্ঞানমার্গের জটিলতা ছেড়ে ভারতবর্ষের ধর্মগুরুরা যখন প্রধানতঃ ভক্তিমার্গ আশ্রয় করলেন, জনসাধারণের চিত্ত যখন জ্ঞান-বুদ্ধির অনধিগম্যের সন্ধানে ব্যর্থ ভ্রমণের দুশ্চিন্তামুক্ত হয়ে মনোমত দেবতাকে পূজা নিবেদন ক’রে তৃপ্ত ও শান্ত হ’ল, সেই যুগের অর্থাৎ হিন্দুরাজত্বের শেষদিকের এবং মুসলমান রাজত্বকালের সংস্কৃত নারীকবিরা শিব, লক্ষ্মী, বিষ্ণু, মীনাক্ষী প্রভৃতি দেবদেবীর বন্দনা গেয়ে আবার নিজেদের সত্য পরিচয় অর্থাৎ ধর্মপ্রাণতার পরিচয় দিয়েছিলেন, এও আমরা দেখতে পাব। নারীর মন স্বভাবতঃই পুরুষের চেয়ে বস্তুতান্ত্রিক, ধরবার ছোঁবার জিনিষ না পেলে তাঁদের মধ্যে অধিকাংশেরই মন জোর পায় না, রচনায় দানা বাঁধে না। এও সম্ভব যে প্রথম দিকের নারীকবিদের লেখায় সে যুগের বিভিন্ন দর্শনশাস্ত্রের জটিলতা ধর্মালোচনায় বাধা দিয়ে থাকতে পারে।

 অতি প্রাচীন যুগের কোনো নারীর লেখা সম্পূর্ণ কাব্য আমরা পাইনি, ইতস্ততঃ বিক্ষিপ্ত ‘বচনসমুচ্চয়’ ‘সুভাষিত সংগ্রহ’ ‘সদূক্তি সংগ্রহ’ প্রভৃতি থেকে এবং রাজশেখর দণ্ডী প্রভৃতি আলঙ্কারিকের লেখা থেকে আমরা তাঁদের কথঞ্চিৎ পরিচয় মাত্র