দাক্ষিণাত্যেও তাঁর কবিত্ব খ্যাতি পৌঁছেছিল, ‘রসবতী’ প্রিয়ম্বদা নামে তিনি ভারতবিখ্যাতা হয়েছিলেন।
মহাপুরুষ শ্রীচৈতন্যের সাধনসহচর নিত্যানন্দ প্রভুর পত্নী জাহ্নবা দেবী ষোড়শ শতাব্দীর এক জন শ্রেষ্ঠা বিদুষী ছিলেন। দক্ষিণ পশ্চিমে উড়িষ্যা থেকে পূর্বে আসাম এবং উত্তর পশ্চিমে বৃন্দাবন পর্যন্ত গৌড়িও বৈষ্ণব ধর্ম প্রচারের জন্য যে বিরাট আন্দোলন চ’লছিল তিনি তার অন্যতমা পরিচালিকা ছিলেন। তিনি বহু নর নারীকে দীক্ষা দিয়েছেন এবং ধর্মজীবনের প্রেরণা দিয়েছেন, তাঁর ভক্তি, পাণ্ডিত্য, প্রচার-কুশলতা, সংগঠনসামর্থ্য সবই অনন্যসাধারণ ছিল। এই মহীয়সী নারীর মৃত্যুর পর তাঁর উপযুক্ত পুত্রবধু বীরচন্দ্র-পত্নী সুভদ্রা দেবী শ্বাশুড়ির উদ্দেশ্যে ‘অনঙ্গকদম্বাবলী’ নামে একশত শ্লোকাত্মক স্তোত্ররচনা করেন। তার একটি শ্লোক উদাহরণ স্বরূপ তুলে দিচ্ছি:
“বন্দে হহং তব পাদপদ্মযুগলং মৎপ্রাণ দেহাস্পদম
সত্যংব্রূমি কৃপাময়ি ত্বদপরং তুচ্ছং ত্রৈলোক্যাস্পদম্॥
শ্রীল শ্রীচরণারবিন্দমধুপো মন্মানসং নেচ্ছতি
হা মাতঃ করুণালয়ে তব পদে দাস্যং কদা যাস্যতি॥”
শাশুড়ির প্রতি পুত্রবধুর এই ভক্তি আজকের দিনে বাড়াবাড়ি ব’লে অনেকের মনে হতে পারে, কিন্তু জাহ্নবা দেবী এই ভক্তির যোগ্যা পাত্রী ছিলেন সে বিষয়ে বিন্দুমাত্র সন্দেহ নেই, অপর দিকে বাঙ্গালীর মেয়ে তখনও শ্রদ্ধেয়াকে শ্রদ্ধা নিবেদন করতে লজ্জিত হ’ত না এও সত্য। অবশ্য সুভদ্রা দেবী নিজে গুণী ছিলেন বলেই গুণীর মর্য্যাদা বুঝেছিলেন।