পাতা:সাহিত্যে নারী ⦂ স্রষ্ট্রী ও সৃষ্টি - অনুরূপা দেবী.pdf/৮৯

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
সাহিত্যে নারী ⦂ স্রষ্ট্রী ও সৃষ্টি - অনুরূপা দেবী
৬৯

 পরবর্তী যুগে খড়দার মা গোঁসাইনামী বৈষ্ণব ধর্মনেত্রীদের মধ্যে ভক্তিশাস্ত্রের এবং দর্শনের চর্চা অব্যাহত ভাবে কিছু দিন পূর্ব পর্যন্ত চ’লে এসেছে। গ্রামে গ্রামে নগরে নগরে শিক্ষিতা বৈষ্ণবীদের পাঠিয়ে এই ‘মা গোঁসাইরা’ সে দিন পর্যন্ত বাংলার অন্তঃপুরে জ্ঞানের দীপ জ্বালিয়ে রেখেছিলেন। এঁদের ঋণ আজকের শিক্ষিতা নারীরা যদি ভুলে যান তা’হলে শুধু অকৃতজ্ঞতা হবে না, মহাপাপ হবে। এই বৈষ্ণব বিদুষীদের বিস্তৃত পরিচয় এখনও হয়ত সংগৃহীত হ’তে পারে, কিন্তু সে জন্য সম্যক চেষ্টা হয়নি। আমরা তাঁদের মধ্যের সবচেয়ে সুপ্রসিদ্ধা হেমলতা এবং গঙ্গা দেবীর নাম শুধু জানি। হেমলতা প্রখ্যাতা ধর্মগুরু ছিলেন, সুবিখ্যাত কবিকর্ণপুর ছিলেন তাঁর শিষ্য। সুপ্রসিদ্ধা স্বর্ণকুমারী দেবী তাঁর জীবন-স্মৃতিতে এমনই একজনের কথা উল্লেখ করেছেন, যিনি ঠাকুর-পরিবারের মেয়েদের শিক্ষা দিতে তাঁদের অন্তঃপুরে যেতেন। কিন্তু তাঁর ব্যক্তিগত পরিচয় দেননি।

 সপ্তদশ শতাব্দীর সবচেয়ে বিখ্যাতা সংস্কৃত নারী কবি বৈজয়ন্তী দেবীর জন্ম আনুমানিক ১৫৫০ শকাব্দে পদ্মাতীরে ধানুকা গ্রামে এক অধ্যাপক ব্রাহ্মণের ঘরে হয়ে ছিল। কোটালিপাড়ার বিখ্যাত কবি কৃষ্ণনাথ সার্বভৌমের সঙ্গে তাঁর বিবাহ হয়। পিতার শিক্ষার ফলে বৈজয়ন্তী বাল্যেই কাব্য ব্যাকরণ এবং ন্যায়শাস্ত্রে ব্যুৎপত্তি লাভ করেন। তাঁর শ্বশুর তাঁর গুণ দে’খে তাঁকে নিজেদের চেয়ে নীচু ঘর থেকে নিয়ে এসেছিলেন, কিন্তু তাঁর পুত্রের আভিজাত্য গর্ব ছিল পিতার চেয়ে অনেক বেশী। তিনি রূপ’হীনা এবং কৌলীন্যহীনা বৈজয়ন্তীকে দীর্ঘকাল অনাদর ক’রে পিতৃগৃহে ফেলে রেখেছিলেন।