পাতা:সাহিত্যে নারী ⦂ স্রষ্ট্রী ও সৃষ্টি - অনুরূপা দেবী.pdf/৯৮

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
৭৮
সাহিত্যে নারী ⦂ স্রষ্ট্রী ও সৃষ্টি - অনুরূপা দেবী

ঋগ্বেদের যুগ থেকে অতি আধুনিক যুগ পর্যন্ত দেবভাষা চর্চার ধারা নারীরা অব্যাহত রেখেছেন। উত্তরভারতে পারস্য ও গ্রীকসভ্যতার প্রভাব এর ক্ষতি ক’রতে না পারলেও অনুলোমবিবাহের ফলে বহু অনার্য নারী আর্যসমাজে স্থানলাভ ক’রে সংস্কৃতচর্চার প্রতি অবহেলা দেখানোর ফলে তাঁদের প্রভাবে ব্রাহ্মণ ক্ষত্রিয়ের মধ্যেও শিক্ষিত পুরুষের ভাষা সংস্কৃত এবং নারীর ভাষা প্রাকৃত দাঁড়িয়ে গেছল, প্রাচীন নাটকে আমরা সর্বত্র এর দৃষ্টান্ত দেখতে পাই। ‘নারীর মুখে সংস্কৃত ভালো শোনায় না’ এমন কথাও সে যুগে শোনা গেছে। নারীর সংস্কৃত জ্ঞানের কিছু কিছু প্রমাণ আমরা দিয়েছি, নারীর মুখে সংস্কৃত স্তব কত সুন্দর শোনায় তা দক্ষিণী সংস্কৃতজ্ঞা গায়িকাদের গান যাঁরা শুনেছেন, তাঁরাই স্বীকার করবেন। মুসলমান যুগে উত্তর ভারতে অবরোধপ্রথার বৃদ্ধি নারীর সংস্কৃতচর্চায় বাধা দিলেও তাকে সমূলে নির্মূল ক’রতে পারেনি, কিন্তু দক্ষিণ ভারতের স্বাধীন ও অর্ধ-স্বাধীন রাজাদের সভায় এবং দেবমন্দিরে অবরোধহীনা নারীরা চিরদিনই অবাধে সংস্কৃত ভাষায় কাব্য চর্চা ক’রে রাজসম্মান লাভ করে এসেছেন। বিভিন্ন প্রাদেশিক ভাষার উন্নতির সঙ্গে সঙ্গে সংস্কৃত চর্চা দেশে ক’মে আসায় আমরা আজ তার মূল্য সম্বন্ধে সত্য দৃষ্টি হারিয়েছি, আমাদের অতীতকেও সেই সঙ্গে ভুলে যেতে বসেছি।

 ভারতীয় সংস্কৃত কবিদের পর বিভিন্ন প্রাদেশিক ভাষার কবিদের সম্বন্ধে আলোচনা করবার আগে প্রাকৃত ভাষার কবিদের সম্বন্ধে কিছু বলা উচিত। এঁদের অনেকেরই সময় নির্ণীত হয়নি। খৃষ্টের পাঁচ ছ’শ’বছর আগে ‘থেরী কবিরা’ যখন